ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা: স্কুল ছাড়তে হয়েছে, জমি বিক্রি করতে হয়েছে কিশোর ইমনের
২০২৩-০৫-০৫
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা থেকে ছাড় পায়নি শিশু কিশোররাও। ময়মনসিংহের ভালুকার কিশোর শিক্ষার্থী ইমন এমনই একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। মাত্র ১৫ বিছর বয়সে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলার চালাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে ইমনের পরিবার। মাত্র নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন মামলার মানসিক চাপে, বাধ্য হয়ে স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছিল ইমনকে।
কথাগুলো বলছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার শিকার কিশোর মোঃ ইমন। ২০২০ সালের ২১শে জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ইমনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে মামলাটি করেন হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুণ।
ইমনের বক্তব্য জানতে আমরা তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলাম। সামাজিক নানাবিধ চাপের কারণে ক্যামেরায় নিজের চেহারা দেখাতে রাজি হননি। তার অনুরোধে পেছন থেকে তার বক্তব্য ধারণ করা হয়। আমরা জানতে চেয়েছিলাম কী পোষ্ট করেছিলেন তিনি।
মামলার শিকার হয়ে ১৬ দিন কিশোর সংশোধনাগারে কাটিয়েছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যে পোস্টটি তিনি শেয়ার করেছিলেন সেটি আরও ১৭৫ জন শেয়ার করেছিলেন। তবে মামলা হয়েছে শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধে।
কিশোর বয়সে মামলার কারণে ইমনের শিক্ষা জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মারাত্নকভাবে। অনেক সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন তার পরিবার, এমনকি নিজের স্কুলেও থাকতে পারেননি তিনি পড়তে হয়েছে অর্থনৈতিক চাপে। জমি বিক্রি করে এবং অধিক সুদে ঋণ নিয়ে মামলার খরচ চালাচ্ছেন তার পরিবার।
মামলার কারণে ইমন এবং তার পরিবারের উদ্বেগ ও উৎকন্ঠারও শেষ নেই। কবে মামলা শেষ হবে, ভবিষ্যতে কী হবে, জানেন না কিছুই। নিম্ন আদালতে ইমনের আইনজীবী মামলারটি খারিজের জন্য আবেদন করলেও সে আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। উচ্চ আদালতে পুনরায় খারিজের আবেদন করবে বলে জানিয়েছে ইমনের পরিবার।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দৃকের এক গবেষণা বলছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে ইমনের মতো ৬৮ জন শিশু-কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এদের অনেকে জামিনে আছেন, কয়েকজন রয়েছেন কিশোর সংশোধনাগারে। তাদের প্রত্যকের বয়স ১২ – ১৭ বছর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ও স্টোরির দেয়ার কারণেই বেশিরভাগ মামলা করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ৪০% মামলাই হয়েছে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী ও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে কটূক্তির অভিযোগে।
শিশুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই মামলায় স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণকারী এই আইনের বাতিলও দাবি করেছেন তিনি।
বিভিন্ন মহল থেকে ইতোমধ্যেই এই আইন বাতিলের দাবিতে আওয়াজ উঠেছে জোরেশোরে । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় সর্বস্তরের মানুষ এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বাকি সবার মতো, কিশোর ইমনও মনে করেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে এই আইন বাতিলের বিকল্প নেই।