মেনস্ট্রুয়াল কাপ: স্যানিটারি প্যাডের স্বাস্থ্যকর, পরিবেশবান্ধব ও সুলভ বিকল্প
২০২২-১০-২৪
[স্যানিটারি প্যাড পৃথিবী জুড়ে ভয়াবহ পরিবেশ সংকট তৈরি করছে। নারীর অনেকগুলো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্যও এটা দায়ী। স্যানিটারি প্যাডের স্বাস্থ্যকর ও সুলভ, সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব বিকল্প হলো মেন্সট্রুয়াল কাপ। মেনসট্রুয়াল কাপের প্রচারে গণমাধ্যম কেন আগ্রহী না, কিভাবে এর প্রসার বৃদ্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশ বিপর্যয় ও দূষণ রোধে ভূমিকা রাখা যেতে পারে, সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করা হয়েছে এই নিবন্ধে]
এই বর্জ্যের একটা বড় অংশই আসে স্যানিটারি ন্যাপকিন থেকে। ছবি: দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
পিরিয়ডের নানা পণ্য
গড়পড়তা নারীর জীবনে পৌনপুনিক এবং অনিবার্য একটি ঘটনা হলো ঋতুস্রাব, ইংরেজিতে যা মেন্সট্রুয়েশন বা পিরিয়ড নামে পরিচিত। কিশোর বয়স থেকে শুরু হয়ে এই ঘটনাটি ঘটতে থাকে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত। নিয়মিত এই ঘটনাটি একেক নারীর অভিজ্ঞতায় একেক রকম। কারো জন্য এটি বয়ে আনে ব্যথা, কারো জন্য দুর্ভোগ, আবার কারো জন্য এটি গোপনীয় এবং লজ্জাজনক একটি বিষয়। একেক নারী ঋতুস্রাবের সময়ে নিঃসৃত রক্তের জন্য একেক ধরনের ব্যবস্থা নেন। এখন যাঁরা বয়সে তরুণ, তাঁদের বেশিরভাগের নানী-দাদীই ঋতুস্রাবের সময়ে ব্যবহার করতেন কাপড়ের পট্টি। অনেকের মা-ও একটা বয়স পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন কাপড়। এমনকি, এখনও অনেক কিশোরী এবং নারী ঋতুস্রাবের সময়ে কাপড় ব্যবহার করেন। বিশেষত নারীদের মধ্যে কাপড় ব্যবহারের হার কিশোরীদের চেয়েও বেশি। একই কাপড় বারবার ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করেন তাঁরা, যদিও এ ব্যবস্থা কতোটা স্বাস্থ্যসম্মত সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে।
বাঁ থেকে: ট্যাম্পন, উইংসবিহীন প্যাড, মেন্সট্রুয়াল কাপ এবং উইংসযুক্ত প্যাড। ছবি: প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ওয়েবসাইট
কাপড়ের পরে আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত পিরিয়ড পণ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন। দেশ-বিদেশের নানা ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে ফ্রিডম, সেনোরা, জয়া, মোনালিসা, হুইসপার, স্টে-ফ্রি ইত্যাদি ব্র্যান্ড। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এ সময়ের আগে সাধারণত নারীরা পুরনো ন্যাকড়া প্যাডের মতো করে ব্যবহার করতেন, অথবা ট্যাম্পনের [আরেকটি পিরিয়ড পণ্য] মতো করে ব্যবহার করতেন উল কিংবা ভেজিটেবল ফাইবার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কিছু নার্স লক্ষ্য করেন যে, সেলুকটন নামে সৈনিকদের ব্যান্ডেজ বাঁধতে ব্যবহৃত একটি উপাদান স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির জন্য একেবারে আদর্শ। সেটাই ছিলো স্যানিটারি ন্যাপকিনের শুরুর ধারণা। ১৯২১ সালে আমেরিকায় যাত্রা শুরু করে প্রথম বাণিজ্যিক স্যানিটারি প্যাড কোটেক্স। এর এক দশক পরে যাত্রা শুরু হয় ট্যাম্পন ব্র্যান্ড ট্যামপ্যাক্সের, সেই সাথে অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় আরো কিছু পণ্যের। এই কম জনপ্রিয় পণ্যগুলোর মধ্যে ছিলো ডুশ, স্যানিটারি অ্যাপ্রন, স্পঞ্জ এবং মেন্সট্রুয়াল কাপ। ডুশ ব্যবহৃত হতো যোনির গন্ধ নিয়ন্ত্রণের জন্য। স্যানিটারি অ্যাপ্রন ছিলো এক ধরনের রাবারের অ্যাপ্রন, যার বেল্ট যোনিমুখের সঙ্গে যুক্ত থাকতো। অ্যাপ্রনটি নারীর পোশাকে রক্ত লেগে যাওয়া ঠেকাতে ব্যবহৃত হতো।
ট্যাম্পন এবং মেন্সট্রুয়াল কাপ দুটোই শরীরের ভেতরে প্রবেশ করাতে হলেও ট্যাম্পন বেশি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কারণটি পিরিয়ডকে দেখার দৃষ্টিকোণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে পিরিয়ডের গায়ে গোপনীয়তা এবং লজ্জার তকমা লাগাতে সক্ষম হয়েছে
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় সালোমে গোমেজ উপেগুই জানান, ট্যাম্পন এবং মেন্সট্রুয়াল কাপ দুটোই শরীরের ভেতরে প্রবেশ করাতে হলেও ট্যাম্পন বেশি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনের কারণটি পিরিয়ডকে দেখার দৃষ্টিকোণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে পিরিয়ডের গায়ে গোপনীয়তা এবং লজ্জার তকমা লাগাতে সক্ষম হয়েছে। ইস্টার্ন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির উইমেন্স অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক এলিজাবেথ কিসলিং তাঁর বই ক্যাপিটালাইজিং অন দ্য কার্স:দ্য বিজনেস অফ মেন্সট্রুয়েশন এ দেখিয়েছেন যে, পিরিয়ড পণ্যের বিজ্ঞাপনে পণ্যের ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখানো হতো যে, এটিকে দেখলে বোঝা যায় না এটি পিরিয়ড পণ্য। এমনকি পণ্যের ‘নিঃশব্দ’ (crinkle-free) মোড়কের বিজ্ঞাপনও দেখা যেতো, যা খোলার সময় শব্দ হওয়ার কারণে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে না।
কেন মেন্সট্রুয়াল কাপ কম জনপ্রিয়
পিরিয়ডের সময়ে সর্বাধিক ব্যবহৃত দুটি পণ্য হলো স্যানিটারি প্যাড এবং ট্যাম্পন। স্যানিটারি প্যাড শরীরের বাইরে ব্যবহার করা হলেও ট্যাম্পন শরীরের ভেতরে ব্যবহৃত হয়। এই দুটি পণ্যই পিরিয়ডের রক্ত শোষণ করে। ট্যাম্পনের মতো মেন্সট্রুয়াল কাপও শরীরের ভেতরে ব্যবহার করা হয়। প্যাড বা ট্যাম্পন ৪-৬ ঘণ্টা পরপর বদলাতে হলেও কাপ প্রতি ১২ ঘণ্টায় একবার পরিষ্কার একবার পরিষ্কার করলেই চলে। এতে লিকেজ হওয়ার সম্ভাবনা কম, ফলে পোশাকে রক্ত লাগার সম্ভাবনাও কম। একটি কাপ দশ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় বলে এটি সাশ্রয়ীও। লম্বা সময়ের হিসেব করলে মেন্সট্রুয়াল কাপের চেয়ে প্যাড অথবা ট্যাম্পনে খরচ হয় অনেক বেশি। অন্য দিকে, প্যাড ও ট্যাম্পন একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয় বলে এসব পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার ঝামেলা নেই।
মেন্সট্রুয়াল কাপ বহুবার ব্যবহারের উপযোগী একটি পণ্য। ফলে একে বারবার পরিষ্কার করতে হয় এবং ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। যেসব দেশে টয়লেটের ভেতরে পানির ব্যবস্থা নেই, সেসব দেশের বহু নারীই পাবলিক টয়লেটের বেসিনে অন্যদের সামনে কাপ পরিষ্কার করার বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। তাছাড়া, কাপের রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে ঋতুস্রাব শুরুর সময়ে পরার আগে এবং ঋতুস্রাব শেষে কাপটিকে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা এবং মাঝেমাঝে রোদে দেওয়া। এসব প্রক্রিয়া অন্যদের চোখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অনেক নারীর জন্য অস্বস্তিকর
সালোমে মনে করেন যে, এই কারণেই মেন্সট্রুয়াল কাপের জনপ্রিয়তার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। মেন্সট্রুয়াল কাপ বহুবার ব্যবহারের উপযোগী একটি পণ্য। ফলে একে বারবার পরিষ্কার করতে হয় এবং ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। যেসব দেশে টয়লেটের ভেতরে পানির ব্যবস্থা নেই, সেসব দেশের বহু নারীই পাবলিক টয়লেটের বেসিনে অন্যদের সামনে কাপ পরিষ্কার করার বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। তাছাড়া, কাপের রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে ঋতুস্রাব শুরুর সময়ে পরার আগে এবং ঋতুস্রাব শেষে কাপটিকে ফুটন্ত পানিতে সেদ্ধ করা এবং মাঝেমাঝে রোদে দেওয়া। এসব প্রক্রিয়া অন্যদের চোখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অনেক নারীর জন্য অস্বস্তিকর।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেন্সট্রুয়াল কাপ। ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা
তাছাড়া, অধিকাংশ সংস্কৃতিতে পিরিয়ডকে সাধারণত অপবিত্র মনে করা হয়। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পন ব্যবহারে সাধারণত ভালভা বা পিরিয়ডের রক্ত স্পর্শ করার দরকার পড়ে না। ট্যাম্পন শরীরের ভেতরে ব্যবহৃত হলেও সুতোয় বাঁধা অ্যাপ্লিকেটরের সাহায্যে যোনী এবং রক্ত স্পর্শ না করেই তা ঢোকানো এবং বের করা সম্ভব। অন্য দিকে মেন্সট্রুয়াল কাপ প্রবেশ এবং বের করার ক্ষেত্রে ভালভা স্পর্শ করতেই হয় এবং পিরিয়ডের রক্ত হাতে লাগেই। ঋতুস্রাবের রক্তকে অপবিত্র হিসেবে দেখে আসা নারীদের কাছে এটিকে বিব্রতকর মনে হওয়া বিস্ময়কর নয়। তাছাড়া, কাপ ঢোকানো এবং বের করার জন্যও দক্ষতা ও চর্চা জরুরি। অনেক নারীই অভ্যস্ততার বাইরে গিয়ে এই দক্ষতা তৈরি করতে চান না। যে পদ্ধতিতে একজন নারী তাঁর ঋতুচক্র সামলাতে অভ্যস্ত, তাতে পরিবর্তন আনা অনেকের ক্ষেত্রেই ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কোনো কোনো নারী মনে করেন, মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে এবং যোনীর মাংসপেশী দৃঢ়তা হারাতে পারে। দুটি ধারণাই পুরোপুরি ভুল এবং ভিত্তিহীন। মূলত নারীর এই অস্বস্তি, লজ্জা, অনভ্যস্ততা এবং ভুল ধারণাকে পুঁজি করেই স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং ট্যাম্পনের লাভজনক ব্যবসার বিপুল বিস্তার ঘটে।
কোনো কোনো নারী মনে করেন, মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে এবং যোনীর মাংসপেশী দৃঢ়তা হারাতে পারে। দুটি ধারণাই পুরোপুরি ভুল এবং ভিত্তিহীন। মূলত নারীর এই অস্বস্তি, লজ্জা, অনভ্যস্ততা এবং ভুল ধারণাকে পুঁজি করেই স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং ট্যাম্পনের লাভজনক ব্যবসার বিপুল বিস্তার ঘটে
মেন্সট্রুয়াল কাপের দামও একে বাজারে পিছিয়ে দিয়েছে। মান ও প্যাডের সংখ্যাভেদে বাংলাদেশে ৬০-৪০০ টাকার মধ্যে এক প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, মার্কিন খাদ্য ও ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত মানসম্মত একটি মেন্সট্রুয়াল কাপের দাম বাংলাদেশে ১৮০০-২৫০০ টাকা। একেকটি প্যাড ৬ ঘণ্টার বেশি পরা উচিত না হলেও, একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ সাধারণত ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় বলে আদতে প্যাডের তুলনায় কাপ ব্যবহার করা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী। কেননা যে কোন বিচারেই এক থেকে তিন বছরের প্যাডের খরচেই একটি কাপ কেনা যায়। তবে এতে শুরুতেই একসঙ্গে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি টাকা লাগে বলে অনেকেই কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হন না।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন একটি আশঙ্কাও কাজ করে যে, এতো টাকা দিয়ে কাপ কিনে তা ব্যবহার করতে পারবেন তো? যদি না পারেন, সেক্ষেত্রে পুরো টাকাটাই নষ্ট হবে। আবার এটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত পণ্য হওয়ায় কাউকে দিয়ে দেওয়াও সম্ভব হবে না। এসব ভেবে অনেক নারীই কাপ কেনার আগ্রহ থাকলেও পিছিয়ে যান। তবে, মেন্সট্রুয়াল কাপভিত্তিক অনলাইন বৈশ্বিক কমিউনিটি পুট এ কাপ ইন ইট এর অনেক সদস্যই নিয়মিত পরস্পরের সঙ্গে কাপ অদলবদল করেন। তাঁদের মতে, কাপ গরম পানিতে ফুটিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই তা পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়, যার ফলে কোনো সমস্যা হয় না। কাপ পরিস্কার করার বেলায় জীবাণুনাশক ব্যবহার করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়, কারণ এতে যোনির পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তবে কাপ পরিষ্কারক বিশেষ লিক্যুইড ব্যবহার করা নিরাপদ। এর দামও খুব বেশি না।
দৈনিক ডেইলি স্টারের মতে, গোটা জীবনে প্যাডের পেছনে একজন বাংলাদেশি নারীর গড়পড়তা খরচ প্রায় ৮০,০০০ টাকা। অন্যদিকে সব চাইতে ভালো মানের তিনটি কাপ কেনা সম্ভব মাত্র ৮ হাজার টাকা খরচ করে। বোঝাই যাচ্ছে, মেনস্ট্রুয়াল কাপ জনপ্রিয় কিংবা উৎসাহিত হলে স্যানিটারি প্যাডের এই বিশাল বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে, পণ্যটির উৎপাদনের চাহিদা হ্রাস পাবে রাতারাতি
পরিসংখ্যান বলে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে নারীস্বাস্থ্য সংক্রান্ত পণ্যের বাজারের অর্থমূল্য পোঁছাবে ৩৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। এর বড় অংশ আসে একবারমাত্র ব্যবহারের যোগ্য পণ্য প্যাড এবং ট্যাম্পন থেকে। ২০১৮ সালে এ ধরনের পণ্যের বাজারের অর্থমূল্য ছিলো ৫৯০ কোটি মার্কিন ডলার। গড়পড়তা একজন নারী তাঁর জীবদ্দশায় ৫০০০ থেকে ১৫০০০ প্যাড ব্যবহার করেন। প্যাড বা ট্যাম্পন ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারীর সারা জীবনে খরচ হয় প্রায় ১৮০০ মার্কিন ডলার। ধারণা করা হয়, একজন নারীর সারা জীবনে ৪০০রও বেশিবার পিরিয়ড হয়। বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক ডেইলি স্টারের মতে, গোটা জীবনে প্যাডের পেছনে একজন বাংলাদেশি নারীর গড়পড়তা খরচ প্রায় ৮০,০০০ টাকা। অন্যদিকে সব চাইতে ভালো মানের তিনটি কাপ কেনা সম্ভব মাত্র ৮ হাজার টাকা খরচ করে। বোঝাই যাচ্ছে, মেনস্ট্রুয়াল কাপ জনপ্রিয় কিংবা উৎসাহিত হলে স্যানিটারি প্যাডের এই বিশাল বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে, পণ্যটির উৎপাদনের চাহিদা হ্রাস পাবে রাতারাতি।
মেন্সট্রুয়াল কাপের ইতিহাস
ক্যাটামেনিয়াল স্যাকের নকশা। ছবি: পপুলার সাইন্স
মেন্সট্রুয়াল কাপের প্রথম আদিরূপ বা প্রোটোটাইপ তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যাটামেনিয়াল স্যাক নামে পরিচিত এই উদ্ভাবনটির প্যাটেন্টের সময়কাল বিতর্কিত, তবে ধারণা করা হয় সময়টা ১৮৬০ এবং ১৮৭০ দশকের মধ্যে। সৃজনশীল ডিজাইন সত্ত্বেও বেশিরভাগ ক্যাটামেনিয়াল স্যাকই বাজার পায়নি। এটিকে যোনীর ভেতরে ঢোকাতে হতো এবং স্যাকটি বেল্ট দিয়ে কোমরে আটকানো থাকতো। সময়ের সাথেসাথে আরো নানা ধরনের মেন্সট্রুয়াল ডিভাইস তৈরি হয়, যেগুলো ঋতুস্রাবের রক্ত শোষণ না করে সংগ্রহ করতো। এর মধ্যে কোনো কোনোটির রক্ত ডিভাইসটি যোনী থেকে বের না করেই ফেলে দেওয়া যেতো। তবে এই ডিভাইসগুলো আধুনিক মেন্সট্রুয়াল কাপের মতো আরামদায়ক ও নিরাপদ ছিলো না।
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত চামার্সের বই। ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা
আজ আমরা যে আধুনিক মেন্সট্রুয়াল কাপ দেখি, তার উদ্ভাবক মনে করা হয় আমেরিকান অভিনয়শিল্পী লিওনা চামার্স কে। লেটেক্স রাবারে তৈরি একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ পেটেন্ট করেন তিনি। পেটেন্ট সম্বন্ধে তিনি বলেন, “এর উপস্থিতির ফলে কোনো অস্বস্তি হবে না এবং এর উপস্থিতি সেভাবে টের পাওয়া যাবে না।” কাপের সঙ্গে কোনো বেল্ট, পিন বা বাকল না থাকায় এটি ব্যবহার করার সময়ে নারীরা হালকা-পাতলা এবং আঁটোসাঁটো পোশাক স্বচ্ছন্দে পরতে পারতেন। তাছাড়া, কাপটি নড়াচড়ার ফলে সরেও যেতো না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাবার সংকট দেখা দেয়, যার ফলে ১৯৩৭ সালে লিওনা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। এ বছরই প্রকাশিত হয় তাঁর বই দ্য ইন্টিমেট সাইড অফ এ উওম্যান’স লাইফ।
বামে: টাইমস স্কয়ারে ট্যাসেটের বিজ্ঞাপন। ডানে: নার্সদেরকে পাঠানো ট্যাসেটের ফর্ম
ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা এবং মিউজিয়াম অব মেন্সট্রুয়েশন অ্যান্ড উইমেন্স হেলথ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫০ এর দশকের শুরুতে লিওনা কিছু পরিবর্তনসহ নতুন একটি ডিজাইন পেটেন্ট করেন। নতুন ডিজাইনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো রক্ত নিষ্কাশন সহজতর করার জন্য রাখা ছোট ছিদ্র, যার ভেতর দিয়ে বাতাস চলাচল সম্ভব। এখনকার বেশিরভাগ মেন্সট্রুয়াল কাপেও এই ছিদ্র দেখা যায়। কাপের নিচের অংশে দণ্ডের বদলে একটি লুপ তৈরি করে দেয়া হয়, যাতে ব্যবহারকারী চাইলে বের করার সুবিধার্থে সেখানে সুতো বাঁধতে পারেন। রবাট ওরেক এই পেটেন্টটি কিনে নেন এবং ১৯৫৯ সালে ‘ট্যাসেট’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ট্যাসেটের পরামর্শদাতা এবং প্রচারক হিসেবে নিযুক্ত হন লিওনা চামার্স।
উৎপাদন শুরুর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সতর্কতার সঙ্গে পণ্যটির প্রচারণা শুরু হয়। কারণ ঋতুস্রাব তখন একটি ট্যাবু বিষয় ছিলো। প্রচারণার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন নার্সরা। ওরেক ভেবেছিলেন, নার্সদের প্রশংসাপত্র ব্যবসার প্রচারণা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করবেন তিনি। টাইমস স্কয়ারে ট্যাসেটের একটি বিলবোর্ডও শোভা পেতে থাকে। পিরিয়ড নিয়ে ট্যাবুর কারণে বিজ্ঞাপনে কাপটিকে দেখানো হয়েছে টিউলিপ ফুল হিসেবে, এবং প্রচার চালানো হতো অস্পষ্ট অলংকৃত বার্তার মাধ্যমে।
উৎপাদন শুরুর পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সতর্কতার সঙ্গে পণ্যটির প্রচারণা শুরু হয়। কারণ ঋতুস্রাব তখন একটি ট্যাবু বিষয় ছিলো। প্রচারণার প্রধান লক্ষ্য ছিলেন নার্সরা। ওরেক ভেবেছিলেন, নার্সদের প্রশংসাপত্র ব্যবসার প্রচারণা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করবেন তিনি। টাইমস স্কয়ারে ট্যাসেটের একটি বিলবোর্ডও শোভা পেতে থাকে। পিরিয়ড নিয়ে ট্যাবুর কারণে বিজ্ঞাপনে কাপটিকে দেখানো হয়েছে টিউলিপ ফুল হিসেবে, এবং প্রচার চালানো হতো অস্পষ্ট অলংকৃত বার্তার মাধ্যমে। এর কারণ, সে সময়েও আমেরিকান সমাজে নারীর পোশাক, চাকরি করা ইত্যাদির বিষয়ে নানা ট্যাবু ছিলো। যার ফলে পিরিয়ড বা প্যাড নিয়ে আলোচনা করাটা তেমন গতানুগতিক ছিলো না, আর কাপের আলোচনা ছিলো আরো কঠিন। তারপরেও নানাজন নানা সময়ে এই আপাত অস্বস্তিকর বিষয়ে কথা বলেছেন বলেই সেই ট্যাবু ধীরেধীরে অনেকটাই ভেঙেছে। আর সে কারণেই বর্তমানে আমাদের সমাজেও মেন্সট্রুয়াল কাপের মতো বিভিন্ন ট্যাবু বিষয়ে কথা বলা জরুরি।
তিরিশের দশকের পর নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের বিষয়ে তাঁরা তেমন স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। ঋতুস্রাবের জন্য একই সুরক্ষা বারবার ব্যবহার করার ধারণাটিও তাঁদের জন্য অস্বস্তিকর ছিলো। ট্যাসেট, অর্থাৎ কাপ সম্বন্ধে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো এই যে, নারীরা কাপ খালি করা বা পরিষ্কার করার বিষয়টিতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। আর যেসব নারী পণ্যটি পছন্দ করতেন, বারবার ব্যবহার করা যেতো বলে একবার কেনার পরে তাঁদেরও আর কাপ কেনার দরকার হতো না। এ কারণে ট্যাসেট ১৯৬৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তবে, ব্যবসা চলমান রাখার জন্য কোম্পানিটি ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে নিয়ে আসে নতুন ডিসপোজেবল মেন্সট্রুয়াল কাপ ‘ট্যাসঅ্যাওয়ে’। এর প্রচারণায় বলা হয়, এটি ঋতুস্রাবের রক্তে না গললেও পানির সংস্পর্শে আসলে গলে যাবে। বাজারের অন্যান্য ডিস্পোজেবল মেন্সট্রুয়াল কাপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নতুন এই পণ্যটি। প্রচারণায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানটি, এবং ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়।
ডেইনতেত্তে কাপ। ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা
লিওনা চামার্সকে আধুনিক মেন্সট্রুয়াল কাপের উদ্ভাবক মনে করা হলেও ১৯৩০ এর দশকের আরো দুটি মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্র্যান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা চামার্সের কাপের আগের না পরের তা ঠিকমতো জানা যায় না। সে সময়ে তৈরি সুন্দর সবুজরঙা ডেইনতেত্তে কাপ এখনকার মেন্সট্রুয়াল কাপের মতোই দেখতে। ধারণা করা হয়, প্রাকৃতিক রাবারে তৈরি এই কাপটি ডেইন্টি মেইডের তৈরি খাবার রাখার প্লাস্টিকের পাত্রের সঙ্গে ঘরোয়া পার্টিতে বিক্রি করতেন বিক্রেতা নারীরা। একই সময়ে প্রায় কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের কাপ ফোল্ডেনও পাওয়া যেতো। ধারণা করা হয়, দুটি কোম্পানি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিলো, যদিও এ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায় না। ডেইনতেত্তের পেটেন্ট মেন্সট্রুয়াল কাপের প্রথম পেটেন্ট হলেও এটি লিওনা চামার্সের কাপের আগে (১৯৩৭ সাল) বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যেতো কিনা, তা জানা যায় না।
বামে: ট্যাসঅ্যাওয়ের বিজ্ঞাপন। ডানে: দ্য কিপারের বিজ্ঞাপন। ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা
১৯৮০র দশকে মেন্সট্রুয়াল কাপ আবার ফিরে আসে দ্য কিপার এর মধ্য দিয়ে। ল্যাটেক্স রাবারে তৈরি এই কাপ এখনও পাওয়া যায়, পাশাপাশি পাওয়া যায় এর মেডিক্যাল গ্রেড সিলিকন ভার্সন মুনকাপ। ১৯৮৭ সালে লোউ ক্রফোর্ডের হাতে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। এর প্রচারণায় এটিকে ট্যাম্পনের চেয়ে নিরাপদ এবং বর্জ্যমুক্ত বলার পাশাপাশি এর পরিবেশবান্ধবতার কথাও উল্লেখ করা হয়। সে সময়ে ট্যাম্পন ব্যবহারের ফলে হওয়া টক্সিক শক সিন্ড্রোম বেশ ঝড় তুলেছিলো, যা কিপারের বাণিজ্যের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।
একবিংশ শতকে মেন্সট্রুয়াল কাপ
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মেডিকেল গ্রেড সিলিকন দিয়ে কাপ তৈরি শুরু হয়, যা বহু ব্র্যান্ডকেই ব্যাপক সাফল্য এনে দেয়। ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে, এমন নারীরাও এই উপকরণে তৈরি কাপ ব্যবহার করতে পারতেন। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে লুনেট কাপ। ২০০৯ সালে দৃশ্যপটে আসে মি লুনা ব্র্যান্ড। ২০১০ এর পরে কাপ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়। ট্যাম্পন বা প্যাডের তুলনায় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অনেকেই কাপ ব্যবহারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। ২০১২ সালে ইন্টিমিনা তাদের প্রথম কাপ লিলি কাপ লঞ্চ করে। এরপর থেকে নিয়মিত নতুন নতুন কাপ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। এখনকার বিখ্যাত কাপ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিভা কাপ, অরগানিকাপ এবং সেইফ কাপ। মেন্সট্রুয়াল কাপ ছাড়াও এখন অনেকে চাকতির মতো দেখতে মেন্সট্রুয়াল ডিস্কের দিকে ঝুঁকছেন। এটি একবার ব্যবহারের উপযোগী এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য দুই রকমই পাওয়া যাচ্ছে। মেন্সট্রুয়াল কাপের সঙ্গে ডিস্কের বড়ো পার্থক্য এই যে, এটি ব্যবহার করার সময়ে নিরাপদ এবং ঝামেলামুক্ত যৌনমিলন সম্ভব।
প্রবেশ করানোর পরে মেন্সট্রুয়াল ডিস্ক। ছবি: পিরিয়ড নির্ভানা
বাংলাদেশে কাপের ব্যবহার তেমন পুরনো নয়। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়ছে। মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরিতে এবং ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে তৈরি হয়েছে মেন্সট্রুয়াল কাপ সংক্রান্ত ফেসবুক পেইজ দ্য মাম্বল এবং পেইজটির গ্রুপ রূপ মহল। এ পেইজে এফডিএ অনুমোদিত ব্র্যান্ডের মানসম্পন্ন কাপ কিনতে পাওয়া যায়, যার দাম বাংলাদেশী টাকায় ১৮০০-৩০০০ এর মতো। এর মধ্যে আছে সেইফ কাপ ও অর্গানিকাপ। রূপ মহল গ্রুপে মেন্সট্রুয়াল কাপ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। গ্রুপটি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা শেয়ারের একটি ওপেন প্ল্যাটফর্ম। এছাড়া, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেন্টার ফর মেন অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটিজ স্টাডিজ (সিএমএমএস) মেন্সট্রুয়াল কাপ বিষয়ক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করেছিলো। পোকুলাম নামে জার্মান শিক্ষার্থীদের একটি দল সিএমএমএসকে ৪৫০টি কাপ দেয় যা হ্রাসকৃত মূল্যে সরবরাহ করতো সংগঠনটি। পরবর্তী সময়ে কাপের চাহিদা বাড়লে সিএমএমএস বাণিজ্যিকভাবে কাপ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যের ব্যবস্থা থাকবে। এই পণ্যটির ব্যবহারের বেলাতে মান নির্ধারণ করাটা খুব জরুরি। সে কারণে সরকারের উচিত তেমন একটা মানদণ্ড ঠিক করে দেয়া। যাতে আরও অনেক বিক্রেতা আসেন, পণ্যটি প্রচার পায় এবং মানুষ নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন]। এর বাইরে কাপ ব্যবহারকারীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে বৈশ্বিক কমিউনিটি পুট এ কাপ ইন ইট, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যার সদস্যদের নিয়মিত উপস্থিতি দেখা যায়।
মেন্সট্রুয়াল কাপ জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঋতুস্রাবের আগে ও পরে ফুটন্ত পানিতে কাপ সেদ্ধ করা এবং পিরিয়ড চলাকালীন প্রতিবার পরিষ্কারের সময়ে পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। এছাড়াও কাপ পরিষ্কারের জন্য বিশেষ কাপ লিক্যুইড এবং সেদ্ধ করার জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপ স্টেরিলাইজার পাওয়া যায়। যোনীর নির্দিষ্ট পিএইচ লেভেলের সঙ্গে কাপের পিএইচ লেভেলের সামঞ্জস্য থাকা জরুরি বলে অন্য কোনো পরিষ্কারক দিয়ে কাপ পরিষ্কার করা স্বাস্থ্যকর নয়
মেন্সট্রুয়াল কাপ জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঋতুস্রাবের আগে ও পরে ফুটন্ত পানিতে কাপ সেদ্ধ করা এবং পিরিয়ড চলাকালীন প্রতিবার পরিষ্কারের সময়ে পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়াই যথেষ্ট। এছাড়াও কাপ পরিষ্কারের জন্য বিশেষ কাপ লিক্যুইড এবং সেদ্ধ করার জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপ স্টেরিলাইজার পাওয়া যায়। যোনীর নির্দিষ্ট পিএইচ লেভেলের সঙ্গে কাপের পিএইচ লেভেলের সামঞ্জস্য থাকা জরুরি বলে অন্য কোনো পরিষ্কারক দিয়ে কাপ পরিষ্কার করা স্বাস্থ্যকর নয়। সেইফকাপ কোম্পানির তৈরি স্টেরিলাইজার এবং কাপ ওয়াশিং লিক্যুইডও আমাদের দেশে দ্য মাম্বল পেইজে পাওয়া যায়। দাম যথাক্রমে ৩৫০০ টাকা ও ৬০০ টাকা।
প্যাড ব্যবহারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি
প্যাড ও কাপের প্রতিতুলনায় বিশেষজ্ঞরা কাপকে এগিয়ে রাখেন অনেকগুলো বিবেচনায়। কাপড়ের তুলনায় প্যাড যেমন স্বস্তিদায়ক, তেমনি প্যাডের তুলনায় কাপ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
প্যাড ব্যবহারে অভ্যস্ত বেশিরভাগ নারীই এর নানা অসুবিধা সম্বন্ধে অবগত, যার মধ্যে আছে চুলকানি, র্যাশ, ভেজা ভাব, উরু ছিলে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের দেশে ট্যাম্পনের ব্যবহার তেমন জনপ্রিয় না হলেও ট্যাম্পনের নানা ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধেও জানা যায়। ট্যাম্পন ব্যবহারে টক্সিক শক সিন্ড্রোম বা টিএসএস এর ঘটনাও অপেক্ষাকৃয় বেশি। অন্যদিকে, মেনস্ট্রুয়াল কাপে টিএসএস এর সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। সারা বিশ্বে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে টিএসএস সংক্রমণের ঘটনা হাতেগোনা কয়েকটি। মেনস্ট্রুয়াল কাপের একমাত্র জটিল দিক হলো এটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সতর্ক থাকা।
প্যাড ব্যবহারে অভ্যস্ত বেশিরভাগ নারীই এর নানা অসুবিধা সম্বন্ধে অবগত, যার মধ্যে আছে চুলকানি, র্যাশ, ভেজা ভাব, উরু ছিলে যাওয়া ইত্যাদি। আমাদের দেশে ট্যাম্পনের ব্যবহার তেমন জনপ্রিয় না হলেও ট্যাম্পনের নানা ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধেও জানা যায়। ট্যাম্পন ব্যবহারে টক্সিক শক সিন্ড্রোম বা টিএসএস এর ঘটনাও অপেক্ষাকৃয় বেশি। অন্যদিকে, মেনস্ট্রুয়াল কাপে টিএসএস এর সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে
মেন্সট্রুল কাপ নিয়ে একটা অত্যন্ত ভুল প্রচারণা এর ব্যবহারকে কম বয়েসী নারীদের মাঝে সীমিত করেছে। এ বিষয়ে ওপরেও একবার বলা হয়েছে যে কোনো কোনো নারী মনে করেন, মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারে হাইমেন ছিঁড়ে যেতে পারে এবং যোনীর মাংসপেশী দৃঢ়তা হারাতে পারে। মেনসট্রুয়াল কাপ বিষয়ে এই দুটি ধারনাই ভিত্তিহীন। বরং স্বাস্থ্যগত স্বস্তির দিকগুলো বিবেচনা করলে কাপ ব্যবহারে অভ্যস্তরাই বেশি স্বস্তিতে কাটান।
বরং প্যাডের দাম বেশি হওয়াতে বহু নারী দীর্ঘক্ষণ একই প্যাড পরে থাকতে বাধ্য হন। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর কিন্তু বহুল চর্চিত একটা ঘটনা। দীর্ঘক্ষণ একই প্যাড বা ট্যাম্পন পরে থাকা জরায়ুর নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এভাবে প্যাড এবং ট্যাম্পন কেবল পরিবেশের জন্য নয়, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যও নানা ঝুঁকি বহন করে চলেছে।
নারীর ভ্রমণকে গতিশীল করবে কাপ
জীবনের প্রয়োজনে নারীদেরকে এখন অনেক কারণেই ভ্রমণ করতে হয়। সেটা হতে পারে অফিসে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আসা-যাওয়া, গবেষণা কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা বিদেশে ছোটাছুটি, অথবা নিছক আনন্দ ভ্রমণ। পিরিয়ডের অস্বস্তি আনন্দের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে তো দাঁড়ায়ই, কাপড়ে দাগ লাগার চিন্তা, প্যাড কোথায় ফেলা যাবে তার চিন্তা কাজের মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এসব চিন্তা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি দিতে পারে মেনস্ট্রুয়াল কাপ। কেননা এটি ব্যবহারে পোশাকে রক্ত লাগার সম্ভাবনা কম তো বটেই, সেই সঙ্গে এটি দীর্ঘ সময় পরে থাকা যায়। তাছাড়া এটি ব্যবহারে র্যাশ, ঘাম বা চুলকানির সম্ভাবনাও থাকে না। এসব কারণে পিরিয়ডের সময়ে গতিশীল ও চিন্তামুক্ত থাকতে কাপ ব্যবহারের বিকল্প নেই।
প্যাডের উপকরণগুলোর দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। কেবলমাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য এসব পণ্য নিয়মিত যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করে তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এর বহু অংশই মাটিতে মেশে না এবং এগুলো পুনপ্রক্রিয়াজাত ও পুনর্ব্যবহারের উপযোগী নয়।
সব দিক বিবেচনা করে বহু নারীই এখন মেন্সট্রুয়াল কাপের বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন।
স্যানিটারি প্যাড যেভাবে পৃথিবীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে
প্যাডের উপকরণগুলোর দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। কেবলমাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য এসব পণ্য নিয়মিত যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করে তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ এর বহু অংশই মাটিতে মেশে না এবং এগুলো পুনপ্রক্রিয়াজাত ও পুনর্ব্যবহারের উপযোগী নয়।
মেন্সট্রুয়াল কাপ কেবল এ ধরনের বেশিরভাগ সমস্যার সমাধানই করে না, বরং তা মাটি-জলে আরো অনেক বেশি বর্জ্য জমা হওয়া থেকেও পৃথিবীকে বাঁচিয়ে দেয়। মেন্সট্রুয়াল হেলথ অ্যালায়েন্স ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, একেকটি প্যাড মাটির সঙ্গে মিশতে ৫০০ থেকে ৮০০ বছর সময় লাগে। একেকটি ট্যাম্পন মাটিতে মিশতে সময় লাগে ৫০০ থেকে ১০০০ বছর। প্রতি বছর শুধু ভারতেই ১২৩০ কোটি প্যাড ভূমিতে জমা হয়, যার ফলে উৎপন্ন হয় ১১৩০০০ টন বর্জ্য। শুধু ভারতে প্রতিদিন উৎপন্ন মেনস্ট্রুয়াল কাপ বর্জ্যের পরিমাণ ২০০ টন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ১২০০ কোটি প্যাড ও ৭০০ কোটি ট্যাম্পন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ট্যাম্পন, প্যাড, প্যান্টি লাইনার এবং এগুলোর মোড়ক মিলিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর উৎপন্ন হয় ২ লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য। প্রতি বছর একজন নারী প্রায় ১৫০ কিলোগ্রাম মাটির সঙ্গে মেশে না এমন বর্জ্য উৎপন্ন করেন। অর্থাৎ গোটা পৃথিবীতে পিরিয়ডের সময়ে ডিসপোজেবল পণ্য ব্যবহারের ফলে কোন মাত্রার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে চলেছে তা কল্পনা করাটাও কঠিন।
বিজ্ঞাপনের চাপ
সময়ের সাথেসাথে পিরিয়ডের সময়কার অভ্যাসে বহু পরিবর্তন এসেছে। একটা সময়ে কাপড়ের ফালিই একমাত্র উপায় হলেও এরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন এ দেশের বহু নারীকেই স্বস্তি দিয়েছে। বেল্ট সিস্টেমের প্যাডের পরে এসেছে আঠাযুক্ত প্যাড, এরপর উইংসযুক্ত প্যাড।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্যাডের বিজ্ঞাপন এখন খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। পিরিয়ড নিয়ে অস্বস্তি ও ট্যাবুর মাত্রা বেশ খানিকটা কাটিয়ে দিতেও সাহায্য করেছে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা।
সেনোরা কনফিডেন্স প্যাডের একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, মাতৃহীন কিশোরী মেয়েকে বাবা প্যাড কিনে এনে দিচ্ছেন। আরেকটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, টানাটানির সংসারেও বাবা-মা কিশোরী কন্যার প্যাড কেনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। স্বামী স্ত্রীর জন্য, অথবা মেয়ে মায়ের জন্য প্যাড কিনছেন এমন বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিঃসন্দেহে একটা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এই বিষয়ে সমাজে সংবেদনশীলতা তৈরির ক্ষেত্রে। পিরিয়ড সংক্রান্ত অনেক লুকোছাপার বিষয়ে এ ধরনের বিজ্ঞাপন মানুষকে ভাবাতে সক্ষম।
তবে, এর অন্য একটি দিকও রয়েছে। গণমাধ্যম পিরিয়ড বিষয়ে অনেক রকম অস্বস্তি কাটানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখলেও বিজ্ঞাপনের চাপের কারণে গণমাধ্যম সুলভ ও স্বাস্থ্যসম্মত বিকল্প থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিকর পণ্যে আমাদের আটকে রাখছে কি না, সেটাও আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
প্যাডের মতো মেন্সট্রুয়াল কাপের বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় না। এর কারণটা আগেকার আলোচান থেকেই খানিকটা আন্দাজ করা যাবে। একজন সচ্ছল নারী জীবনে ৪০০ প্যাড ব্যবহার করে থাকলে কাপের বেলায় এই সংখ্যাটা ১০টিও হবে না। ফলে কাপ সাশ্রয়ী ও উপকারী হলেও, এবং এতে পরিবেশ রক্ষা হলেও, কাপ উৎপাদন শিল্পটি কখনোই প্যাড উৎপাদন শিল্পের ধারেকাছে যেতে পারবে না। ফলে এর বিজ্ঞাপন দেয়ার সামর্থ্য হবে কম, গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও তার থাকবে না। গণমাধ্যম কাপ নিয়ে আগ্রহী না থাকার ফলে বহু নারী হয়তো তার জন্য উপকারী ও সাশ্রয়ী এই পণ্যটি সম্বন্ধে জীবনেও কখনো জানতে পারেন না। অনেকে জানলেও প্রচারণার অভাবে তাঁদের সচেতনতা তৈরি হয় না। অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন ও ভীতিও থেকে যায়। অথচ মূলধারার গণমাধ্যমে মেনস্ট্রুয়াল কাপ বিষয়ক নিয়মিত আলোচনা, সংবাদ ও তথ্যের উপস্থিতি এই অজ্ঞতা কাটাতে সহায়ক হতে পারতো।
কাপ যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে
মেন্সট্রুয়াল কাপকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য বহুমুখী উদ্যোগের প্রয়োজন। একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে কিস্তিতে কাপ কেনার সুবিধা তৈরি করা। কাপ কিনতে এককালীন বেশি টাকার দরকার হয় বলে অনেক নারীই কাপ কেনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যান। কিস্তিতে প্রতি মাসে ছোট অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে কাপ কেনা সম্ভব হলে আরো বেশি নারী কাপ ব্যবহারে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা যায়। ডাক্তাররা এ বিষয়ে প্রচারণা চালালেও অনেক নারীরই কাপের বিষয়ে আস্থা তৈরি হবে।
কাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরেকটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে দেশেই কাপ উৎপাদন করা। মেন্সট্রুয়াল কাপের উচ্চমূল্যের একটা বড় কারণ হলো দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হওয়া। দেশের বাইরে থেকে কাপ আনতে হলে পরিবহন খরচ বাড়ে এবং ট্যাক্স দিতে হয়। দেশে কাপ উৎপাদন করা সম্ভব হলে এই বাড়তি খরচগুলো অনেকাংশেই কমে আসবে। তবে, মেন্সট্রুয়াল কাপ দীর্ঘমেয়াদি উপকরণ হওয়ায় এর বাজার সঙ্গত কারণেই প্যাডের বাজারের চেয়ে ছোট হবে। সে কারণে অনেক ব্যবসায়ীই এর উৎপাদন সম্বন্ধে অনাগ্রহী হতে পারেন।
নারীদের কাপ ব্যবহার করতে না চাওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হলো কাপ সম্বন্ধে অস্বস্তি ও ভুল ধারণা। পাঠ্যসূচিতে কাপের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই অস্বস্তি অনেকটা কাটতে পারে। মেয়েদেরকে উপবৃত্তির টাকার সঙ্গে মানসম্মত কাপ সরবরাহ করা যেতে পারে, যার দাম কিস্তিতে কেটে রাখা যেতে পারে উপবৃত্তির টাকা থেকেই। কঠোরভাবে কাপের মান নিয়ন্ত্রণ করা হলে এবং এ বিষয়ে নারীদের আশ্বস্ত করা হলেও এই অস্বস্তি কমতে পারে। কাপ ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য পাবলিক টয়লেট, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেটগুলোকে মানসম্মত করে তোলাও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, টয়লেট অস্বাস্থ্যকর হলে সেখানে কাপ পরিষ্কার করতে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন না, এবং অনেক ক্ষেত্রে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকতে পারে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কাপের মান নিয়ন্ত্রণ করা হলে এবং এটি উৎপাদন ও বিতরণের ব্যবস্থা করে হলে নারীদেরকে কাপ ব্যবহারে উৎসাহী করে তোলার ক্ষেত্রে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। ঋতুস্রাব হয় এমন সকল কিশোরী ও নারী মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন- এটি নিশ্চিত করে এবং প্যাডের পরিবেশগত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে প্যাডের ওপর পরিবেশ কর বসানো যেতে পারে। আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে এই কর কার্যকর করা হলে নারীরা প্যাডের বদলে কাপ ব্যবহার করার আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও পাবেন।
গ্রামীণ নারীদের জন্য কাপ একটি ব্যাপক স্বস্তির উপকরণ হয়ে উঠতে পারে। গ্রামীণ নারীদেরকে নিয়মিত অনেক ভারী কাজ করতে হয়, ঋতুস্রাবের সময়েও যা থেকে ছুটি পাওয়া যায় না। প্যাড বারবার নগদ টাকা দিয়ে কিনতে হয় বলে অনেক নারীই প্যাডের বদলে কাপড় ব্যবহার করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে একই প্যাড পরে থাকেন। মেন্সট্রুয়াল কাপের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে প্রচারণা চালানো হলে এবং তাঁদেরকে সুলভ মূল্যে কিস্তিতে মানসম্মত প্যাড সরবরাহ করা হলে ঋতুকালীন সময়ে স্বস্তি মিলবে তাঁদের, কমবে স্বাস্থ্যঝুঁকিও।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডন, বিবিসি নিউজ, দ্য নিউ রিপাবলিক, ক্যাশ ফ্লো: দ্য বিজনেস অফ মেন্সট্রুয়েশন (ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বিয়া লিমিটেড প্রেস থেকে ২০০২ সালে প্রকাশিত ক্যামিলা মর্ক রস্তভিকের বই), মেডিক্যাল নিউজ টুডে, লুনেট ওয়েবসাইট, পিরিয়ড নির্ভানা ওয়েবসাইট, পপুলেশন সাইন্স ওয়েবসাইট, দ্য মাম্বল, সিএমএমএস।