ছবির জলাবদ্ধতা দেখে মনে হতে পারে, বন্যায় পুরো এলাকা ডুবে আছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রাজধানীর যাত্রাবাড়ির জুরাইন এলাকার প্রতিদিনের চিত্র এটি। কোন রকমের ভারি বৃষ্টিপাত বা বন্যা ছাড়াই সারাবছর পানিবন্দী জীবন কাটান এই এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ…
জলাবদ্ধতা কারণে প্রতিদিন লোকসান গুণছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে বিদায় নিচ্ছেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ ঋণগ্রস্তও হয়ে বিপাকে আছেন…
পানিতে ডুবে থাকা এই এলাকা পাড়ি দিতে প্রতিবার অনেক টাকা খরচ করতে হয়। আর সামান্য বৃষ্টিতেই রীতিমত প্লাবন তৈরি হয়। সেরকম বৃষ্টিবাদলার দিনে রাস্তায় বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে বলে অনেকে ঘর থেকেই বের হন না, ছেলেমেয়েদেরকেও পাঠান না স্কুলে …
তবে জীবিকার তাগিদে অনেককেই প্রতিদিনই বের হতে হয়। পানি মাড়িয়ে চলাচলের কারণে এলাকার অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে…
বছরের পর বছর ধরে চলা এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্তৃপক্ষের কোন ভূমিকা দেখছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সবকিছু জানার কিংবা দেখার পরও তাদের নির্বিকার ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।
দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকট নিরসনের অনেক সহজ উপায় থাকলেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় আইনের আশ্রয় নেয়ার মত বিশেষজ্ঞদের।
উন্নয়ন পরিকল্পনার অদূরদৃষ্টিই জুরাইনের এই জলাবদ্ধতার জন্য প্রধানত দায়ী। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেমন এখানে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে, তেমনি নতুন প্রকল্পগুলোতেও পানি অপসারণের যথেষ্ট বন্দোবস্ত রাখা হয়নি, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
জুরাইনের এই্ জনপদকে মনে হবে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা কিংবা সরকার, সকলেই পরিত্যাগ করেছে। দীর্ঘমেয়াদে জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার ওয়াসার পানি দূষিত, এখানে নেই বর্জ্য অপসারণের কোন বন্দোবস্ত, বরং পুরো অঞ্চলটিকে উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধার দিক দিয়ে পরিত্যক্তই বলতে হবে। জুরাইনের মানুষদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি একবার ওয়াসার এমডি তাকসিমের জন্য উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন জগভর্তি শরবত। ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওয়াসার এমডির জন্য উপহার নেয়া মিজানুরের সেই শরবত, যেটি তিনি সংগ্রহ করেছেন জুরাইনের পানির কল থেকে।
বাধ্য হয়ে যে মানুষেরা এখানে থাকেন, জলবন্দি যে শিশুরা রাস্তায় চলাচল করেন, তাদেরকে কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যাবে না আলো ঝলমলে নগরীর এই শহরতলীর বাস্তবতা…