বুধবার ৭ই চৈত্র ১৪২৯ Wednesday 22nd March 2023

বুধবার ৭ই চৈত্র ১৪২৯

Wednesday 22nd March 2023

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

পদ্মা সেতু: বৃহৎ প্রকল্প নির্মাণে আরো স্বচ্ছতা প্রয়োজন

২০২২-০৬-২৬

দৃকনিউজ প্রতিবেদন

বাংলাদেশে ‘পদ্মা সেতু’ যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বাড়ি ফেরা বা কাজের ক্ষেত্রে ফেরি পারাপারের ভোগান্তি, রাস্তায় যানজট, অনিয়ম দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে এক ধরনের তিক্ত বাস্তবতায় ফেলেছে।  পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বা আনন্দের বিষয় বটে।

 

তবে যেকোনো স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশ ও প্রতিবেশগত হিসাব-নিকাশের আলাপ জনগণের মাঝে নিয়ে আসাটা জরুরি ছিল। এবং দেশের নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে আরও বিশাল পরিসরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ছিল। 

 

‘পদ্মা সেতু’ নির্মাণ প্রয়োজনীয় হলেও দেশ ও মানুষের বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও বহু পদক্ষেপ অগ্রাধিকার পাবার দাবি রাখে। এই সেতু নির্মাণের মোট খরচ প্রায় ৩০ হাজার ১শ’ ৯৩ কোটি টাকা। এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের ঢাকার মুখাপেক্ষী না করে এই বিশাল অংকের টাকা ‘সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী’র স্থায়ী উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট ছিল। 

 

৩০ হাজার কোটি টাকায় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে উন্নত হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় কৃষির উপযোগী ক্ষেত্র ও শিল্প অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব ছিল। বলা হচ্ছে, অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসার জন্য দ্রুতগতিতে ঢাকায় নিয়ে আসা যাবে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে জেলা-উপজেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি কেন? একইসাথে খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতেও চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরিবেশ মানুষের জন্য যথেষ্ট উন্নত নয়। অন্যদিকে রাজধানীর ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপরেও অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে। 

 

পদ্মা সেতুর কারণে কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তবে স্থানীয় অর্থনীতি বিকশিত করার উদ্যোগ নেয়া হলে টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি করা যেত। 

 

পদ্মা সেতুর নকশায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। এই কারণে কয়েকটি স্প্যান বসাতে জটিলতা হয়। যথাযথ ভূতাত্ত্বিক সমীক্ষা না করার কারণে পলি ও কাদা মাটির স্তর নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছিল। প্রকল্প প্রণয়ন ও নির্মাণকারীরা এক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম কিংবা অবহেলা করেছেন। এসব নানা কারণেই পদ্মা সেতুর ব্যয় বেড়েছে। পদ্মা সেতুর পরিবেশগত বা অর্থনৈতিক সমীক্ষাগুলো নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা গণমাধ্যমে দেখা যায়নি। 
 

পদ্মা সেতুর অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয় নিয়ে গণমাধ্যমে তেমন পর্যালোচনা নেই। বরং একতরফা প্রশংসাকীর্তনই লক্ষ্যণীয়। পদ্মা সেতুসহ এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় নিয়ে ভবিষ্যতে একটি ‘স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা জরুরি।  কেননা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও দুর্নীতি দূর করতে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নেই।