শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ Saturday 23rd November 2024

শনিবার ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

Saturday 23rd November 2024

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ

২০২১-০৭-০৯

দৃকনিউজ প্রতিবেদন

সেজান কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণঘোপ এলাকায় সেজান ও সজীব ফুড ব্র্যান্ডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার চিত্র তুলে ধরতে যাওয়া সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিক ও জনসাধারনের ক্ষোভের মুখে পড়েন। ০৯ জুলাই অগ্নিকাণ্ডের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টায়ও যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি, নিহতের স্বজনেরা কোনো নিশ্চিত খবর পাচ্ছেন না, তখন মালিকপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাংবাদিক বোঝা মাত্রই এই প্রতিবেদককে একজন শ্রমজীবী প্রশ্ন করেন, 'আমরা এত মানুষরে আগুনে আটকা পড়তে দেখলাম আর আপনারা লিখছেন মাত্র তিনজন মারা গেছে? টাকা খাইছেন?' প্রশাসনের দেয়া তথ্য ছাড়া লেখার সমস্যা কী! সেটা বোঝাতে গেলে তারা তখন আরো অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন।

 

রূপগঞ্জের ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক উদ্ধারপ্রচেষ্টা চলাকালে লাফিয়ে নামতে গিয়ে ঘটনাস্থলে দুইজন ও পরে স্থানীয় ইউএস-বাংলা হাসপাতালে একজনসহ মোট তিনজন মৃত্যুবরণ করেন। আগুন লাগার ২০ ঘণ্টা পরও সংবাদ মাধ্যমগুলো জানে না যে, ভেতরে কত লোক কাজ করে, কতজন আটকা পড়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই তথ্যপ্রদানে গড়িমসি করে বলে জানান, দৈনিক প্রথম আলোর জেলা সংবাদদাতা গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, 'আটকে পড়াদের সংখ্যা সম্বন্ধে শুরু থেকেই নিরব ছিল পুলিশ, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।'

 

মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, সংবাদমাধ্যমগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পাশাপাশি নিহতের সংখ্যা 'তিনজন' উল্লেখ করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তারা মনে করেন, সাংবাদিকরা তথ্য গোপন করছেন। পুলিশের কাছে উপস্থিত জনগণ তথ্য পেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নিহতের স্বজনরা বুঝতে পারছিলেন না কী করতে হবে। বাহিনীগুলো তাদের অসহযোগিতা করে বলে তারা জানান। আগে থেকেই চাউর ছিল, নিরাপত্তাকর্মীরা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের চতুর্থ তলার দরজা বন্ধ করে দেয়ায় অনেকে সেখানে আটকা পড়েছে ও আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এক পর্যায়ে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।

 

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণঘোপ এলাকায় সেজান ও সজীব ফুড ব্র্যান্ডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার চিত্র তুলে ধরতে যাওয়া সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিক ও জনসাধারনের ক্ষোভের মুখে পড়েন। ০৯ জুলাই অগ্নিকাণ্ডের দ্বিতীয় দিন বেলা ১১টায়ও যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি, নিহতের স্বজনেরা কোনো নিশ্চিত খবর পাচ্ছেন না, তখন মালিকপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাংবাদিক বোঝা মাত্রই এই প্রতিবেদককে একজন শ্রমজীবী প্রশ্ন করেন, 'আমরা এত মানুষরে আগুনে আটকা পড়তে দেখলাম আর আপনারা লিখছেন মাত্র তিনজন মারা গেছে? টাকা খাইছেন?' প্রশাসনের দেয়া তথ্য ছাড়া লেখার সমস্যা কী! সেটা বোঝাতে গেলে তারা তখন আরো অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন।

 

রূপগঞ্জের ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক উদ্ধারপ্রচেষ্টা চলাকালে লাফিয়ে নামতে গিয়ে ঘটনাস্থলে দুইজন ও পরে স্থানীয় ইউএস-বাংলা হাসপাতালে একজনসহ মোট তিনজন মৃত্যুবরণ করেন। আগুন লাগার ২০ ঘণ্টা পরও সংবাদ মাধ্যমগুলো জানে না যে, ভেতরে কত লোক কাজ করে, কতজন আটকা পড়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই তথ্যপ্রদানে গড়িমসি করে বলে জানান, দৈনিক প্রথম আলোর জেলা সংবাদদাতা গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, 'আটকে পড়াদের সংখ্যা সম্বন্ধে শুরু থেকেই নিরব ছিল পুলিশ, প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।'

 

মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, সংবাদমাধ্যমগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পাশাপাশি নিহতের সংখ্যা 'তিনজন' উল্লেখ করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তারা মনে করেন, সাংবাদিকরা তথ্য গোপন করছেন। পুলিশের কাছে উপস্থিত জনগণ তথ্য পেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। নিহতের স্বজনরা বুঝতে পারছিলেন না কী করতে হবে। বাহিনীগুলো তাদের অসহযোগিতা করে বলে তারা জানান। আগে থেকেই চাউর ছিল, নিরাপত্তাকর্মীরা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের চতুর্থ তলার দরজা বন্ধ করে দেয়ায় অনেকে সেখানে আটকা পড়েছে ও আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এক পর্যায়ে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।

 

হাসেম ফুডসের প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তায় কাজ করা আনসার বাহিনী বন্দুক তুলে গুলির হুমকি দিলে উত্তেজিত জনতা সেই বন্দুক কেড়ে নিয়ে পানিতে ফেলে দেন। ক্ষুব্ধ জনতা তখন পুলিশকে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশ ও র‍্যাব গুলি ছোড়ে এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় মানুষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সাংবাদিকদের কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে পুলিশ ফাঁকা গুলির কথা বললেও পরবর্তীতে অনুসন্ধানে অন্তত ১২জন গুলিবিদ্ধের খোঁজ মেলে। নবম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্র কালাম (ছদ্মনাম) কোভিডের কারণে এখানে একটি কারখানায় কাজে যুক্ত হয়েছেন। তার চোখে গুলি লেগেছে এবং তিনি অন্ধত্বের পথে। কিন্তু পরিচয় প্রকাশ হলে চোখ হারানোর চেয়েও বড় ক্ষতি হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।

 

এই প্রতিবেদক প্রত্যক্ষ করেন, প্রায় সকল সাংবাদিক, উপস্থিত সমস্ত মানুষ জানতে চাইছে যে, কত লোক ভেতরে আটকা পড়েছেন। কারখানার কর্মকর্তারা সহজেই এই তথ্যটি দিতে পারতেন। কিন্তু এই তথ্যটি শেষ পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে। সাংবাদিকরা লাশ নামানোর সময় নিজেরাই গুণেছেন। ওপরে আরো লাশ আছে কিনা দেখতে দেয়া হয়নি নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ৪৯টি লাশ নামানোর পর বলেন, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি। লাশের চূড়ান্ত সংখ্যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা দ্বিধার মধ্যে রয়েছে অনেকেই।

 

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আগে থেকেই ভেতরের অবস্থা অবহিত হন। এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত রূপগঞ্জের ইউএনও শাহ নুসরাত জাহানকে বারবার জিজ্ঞেস করে ভেতরের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করলেও তিনি মুখ খোলেননি। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অনেক তথ্য পেলেও দায়িত্বশীলরা সেগুলোর দায়িত্ব নিতে চাননি। এমনকি তথ্যটি ভুল কিনা, সেটা বলেও তারা সহযোগিতা করেননি।

 

তবে রূপগঞ্জবাসীর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের ভিন্ন প্রেক্ষাপটও রয়েছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ঢাকাবাসী স্থানীয় এক তরুণ মন্তব্য করেন, রূপগঞ্জের মাটিও দুর্নীতিগ্রস্ত। এখানে ভূমিদস্যুরা জনগণের ভিটে-জমি দখলে নিচ্ছে ক্রমান্বয়ে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি অংশ ওই দস্যুদের সহযোগী। এই সাংবাদিকরা প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক এবং জনগণের বিরুদ্ধে সক্রিয়। ফলে এলাকাবাসী 'সাংবাদিক' শব্দটাই পছন্দ করে না।

 

স্থানীয় প্রভাবশালী সাংবাদিকরা কেউ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা প্রাঙ্গনে এসেছিলেন কিনা খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা সাধারণত খবরের জন্য কোথাও যান না, লোক পাঠান। ওইদিনও স্থানীয় প্রভাবশালী সাংবাদিকদের কাউকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।

 

সাংবাদিক ছাড়াও উপস্থিত জনগণ ফায়ার সার্ভিস, র‍্যাব-পুলিশসহ সরকারি বাহিনীগুলোকে দুষতে থাকে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ঠিক পেছনেই ভাঙারির ব্যবসায় নিয়োজিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাসির এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আমার বিশ্বাস, মালিকরা আটকা পড়লে আগুন নিভাইতে এত দেরি হইতো না।'

 

নাসিরের আশঙ্কা, আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে লাশের সংখ্যা কমে যাবে এবং লাশ শনাক্ত না করা গেলে হয়তো মালিকের কোনো ক্ষতিপূরণও দিতে হবে না। এই প্রতিবেদক তাকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে বলতে গেলে তিনি অভিযোগ করেন, 'সাংবাদিকরা সত্য বলে না।'

 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার তৃতীয় তলায় কাজ করতেন রোজিনা খাতুন। তিনি বলেন, 'গত মাসে শ্রমিকরা পাঁচ মাসের ওভারটাইম ও ভাতা বকেয়া পড়ায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। কিছু শ্রমিক দুই মাসের ওভারটাইমের টাকা পেয়েছেন। বাকি রয়েছে তিন মাসের পাওনা। এর মধ্যেই এই আগুন। কে জানে, টাকা না দেয়ার জন্য কিনা, নাকি আন্দোলনের জন্য রাগ হয়ে আগুন দিছে।'

 

তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন এলাকাবাসী বলেন, 'আগুনে তো মালিকগো লস নাই, ইনস্যুরেন্স আছে তো।'

Your Comment