শুক্রবার ৬ই বৈশাখ ১৪৩১ Friday 19th April 2024

শুক্রবার ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

Friday 19th April 2024

বহুস্বর মতামত

তাদের বিকারগ্রস্ত আতঙ্কের দাম শোধ করছি আমরা

২০২৩-০৪-১০

শহিদুল আলম
আলোকচিত্রী, লেখক এবং কিউরেটর

গত ২৪ মার্চ ছিল আর্জেন্টিনার 'স্মরণ দিবস'। আমার আলোকচিত্রী বন্ধু মার্সেলো ব্রডস্কির সঙ্গে আমি বুয়েনোস আইরেসের প্লাজা দে মায়োর কাছে বিশাল এক জনসমাবেশে গিয়েছিলাম। আর্জেন্টিনায় সামরিক জান্তার শাসনের সময়ে মার্সেলোর ২২ বছর বয়সী ভাই গুম হয়েছিলো। মার্সেলো সেখানে বক্তব্য দিতে যাচ্ছিলেন। জনতার গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনকে যেভাবে উদযাপন করছিলো, সেটা দেখাটাও একটা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ব্যাপার ছিলো। একটা সময়ে আর্জেন্টিনায় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং অপহরণের ঘটনা ঘটতো অহরহ। গুম হওয়া ব্যক্তিদের মায়েরা এবং দাদী-নানীরা লড়াই চালিয়ে গেছেন। জনতার সমর্থন এবং তারকাদের অনুকূল ভূমিকাও এক্ষেত্রে সাদর ভূমিকা রেখেছে। সমবেত কণ্ঠে এই জনতা বলছিলো, “আর কখনও না” ।

 

তরুণী একজন নারী সুলতানা জেসমিন ২৪ মার্চ, ২০২৩ তারিখে কারা হেফাজতে মারা যান। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো। তার মৃত্যু হয়েছে একটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে বেসামরিক সরকারের শাসনামলে। তবে দায় অস্বীকারের ধারাটা অনেক বছর আগে আর্জেন্টিনার পাশবিক সামরিক জান্তার মতো একই ধরনের। ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহারও একই রকম স্পষ্ট।

 

প্রধানমন্ত্রীর উক্তির পাশে কৃষকের ছবি থেকে মনে হওয়ার কথা নয় যে কৃষকই উক্তিটা করেছেন অথবা কৃষক আর প্রধানমন্ত্রী পরিচয় অদলবদল করেছেন। বিশেষত, প্রতিবেদনে যদি উক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর বলে স্পষ্টত উল্লেখ করা থাকে তাহলে এ ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনটির ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য

 

আমি ঢাকায় ফিরে আসি ২৮ মার্চ, ২০২৩ তারিখে। দেশে ফিরেই আমি সোজা চলে যাই  বিমানবন্দর থেকে ২য় বাংলাদেশ প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার বিচারকের কাজে। এর মধ্যে অনেক ছবিই ছিলো নিরাপত্তা বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের, যার দায় রাষ্ট্র অস্বীকার করেছে। একইভাবে তারা অস্বীকার করেছে গণমাধ্যমকে দমন, মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের নানা কলাকৌশলের চরম অপব্যবহারের মতো বিষয়গুলোও। স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো পত্রিকার সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চড়া দামের বিষয়ে দিনমজুর জাকির হোসেনের মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। মন্তব্যটি ছিলো এমন- “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।” এই মন্তব্যের সঙ্গে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছিলো, একটি শিশু সাভারের শহীদ স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে আছে। ২৯ মার্চ ভোররাতে শামসকে তুলে নেওয়া হয়।

 

এরপর আসলো প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খবর। আমি যে সময়ে লিখছি, তখন প্রথম আলো কার্যালয় ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। জেসমিনের মৃত্যুর খবর এরই মধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনাম থেকে বিদায় নিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সর্বশেষ ‘নাটকটা’ পরিকল্পিতভাবেই মঞ্চস্থ করা হয়েছে জেসমিনের মৃত্যুর খবর চাপা দিতে। মৃত্যু, অথবা হত্যা।

 

দ্বিচারিতাটা সকলের কাছেই স্পষ্ট। ধর্ষণ এবং হত্যার দায়ে অভিযুক্ত একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে ভিআইপি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া (সায়েম সোবহান আনভীর, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক), অনবরত মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটানোর পরেও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দায়মুক্তি দেওয়া, মতপার্থক্যের যেকোনো আভাসের কণ্ঠরোধ করতে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা- এর সবই স্পষ্টত প্রমাণ করে যে আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং আইন এখন আর জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছে না। কাফকা দেখলে নিশ্চয়ই গর্ববোধ করতেন যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে শামসুজ্জামানকে ‘শিশু হয়রানি’ এবং ‘শিশু নির্যাতনের’ দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ব্যাপারটাকে ক্ষতি প্রশমনের প্রচেষ্টা হিসেবে মোড়কজাত করার সময়ে শিশু অধিকার সচেতন মন্ত্রণালয় উল্লেখ করতে ভুলে গিয়েছিলো যে, ডিজিটাল সিকিরিটি আইনে বহু শিশুকেও আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেককেই আটক করা হয়েছে মিথ্যা মামলায়। একজন কিশোরকে নির্জন কারাবাসে রাখার মত ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে।

 

চুম্বক অংশ সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমজনতার কাছে স্বাধীনতার অর্থ কী, সে বিষয়ক বক্তব্য বছরের অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে স্বাধীনতা দিবসের সংবাদে বেশি প্রাসঙ্গিক। স্বাধীনতার স্মারক স্মৃতিসৌধের দিকে একটি শিশুর তাকিয়ে থাকার ছবি একটি অর্থবহ প্রতীক, যা সংবাদটিকে সমৃদ্ধ করে। গণমাধ্যমের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো একটা ভুলই করেছিলো, সেটা হলো ছবিটি সরিয়ে ফেলা

 

প্রতিবেদক ও আলোকচিত্রীরা একইসঙ্গে কাজ করেন। একজন অভিজ্ঞ আলোকচিত্রী সরাসরি উপস্থাপনার চেয়ে বেশি নজর দেন ঘটনার দিকে।  জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবেদনে তাঁর উক্তি থাকতে পারে। সঙ্গের ছবিটা প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্যটি দিচ্ছিলেন তখনকার হতে পারে। আবার, ছবিটি অন্য কোনো ঘটনার সময়ে তোলা ফাইল ছবি অথবা সেই নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের অন্য কোনো গুরুত্ববহ ছবি হতে পারে। ছবিটি ক্ষেতে কাজ করতে থাকা কোনো কৃষকেরও হতে পারে, যা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলছে। প্রধানমন্ত্রীর উক্তির পাশে কৃষকের ছবি থেকে মনে হওয়ার কথা নয় যে কৃষকই উক্তিটা করেছেন অথবা কৃষক আর প্রধানমন্ত্রী পরিচয় অদলবদল করেছেন। বিশেষত, প্রতিবেদনে যদি উক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর বলে স্পষ্টত উল্লেখ করা থাকে তাহলে এ ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনটির ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য। 

 

সাংবাদিকতা বিষয়ক গুরুতর উদ্বেগের কিছু ব্যাপারও এখানে থাকতে পারে। সাংবাদিকতার নৈতিকতা অনুযায়ী কোনো ছবি তোলার জন্য টাকা দেওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। অবশ্য, সব সমাজেই নিজস্ব কিছু বাস্তবতা রয়েছে। সময় নেওয়ার জন্য হওয়া ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া, ১০ টাকা দিয়ে একটা ফুল কেনা কিংবা কোনো শিশুকে মিষ্টি খাওয়ানো গ্রহণযোগ্য চর্চা, বিশেষত যখন যার ছবি তোলা হচ্ছে সে স্পষ্টতই দরিদ্র। শিশুকে ব্যবহার করে সুযোগ নেওয়া হচ্ছে না এমন কোনো পাবলিক পরিস্থিতিতে ছবি তোলা না হলে শিশুর ছবি তোলার জন্য অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন হয়। পাবলিক পরিসরে, যেখানে যার ছবি তোলা হচ্ছে তার আইনানুগ বিষয় সম্বন্ধে বোঝাপড়া থাকার সম্ভাবনা কম এবং আইনি দলিল সই করতে যে ভয় পেতে পারে, তার কাছ থেকে প্রামাণিক একটি সম্মতিপত্র নেওয়াটা বেশ কঠিন। এ কারণে এটি বাংলাদেশের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, চর্চিত তো নয়ই। আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই তর্ক করি। প্রভাব খাটিয়ে ছবি তোলা, বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া কিংবা অন্যের কাজ চুরি করাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব কারণে যে ছবি পুরস্কৃত হতে পারতো সেটা আর হয় না। এসব বিষয় বিভিন্ন সময়ে বিচারকদের মধ্যে দীর্ঘ বিতর্কের জন্ম দেয়। স্থানীয় ক্যামেরা ক্লাবের বিচারক হওয়া থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর আন্তর্জাতিক বিচারকমণ্ডলির সভাপতির ভূমিকা পালনের অভিজ্ঞতা আমার আছে। এমন কোনো ঘটনা আমার সামনে আসেনি, যেখানে কেবল একটা নিয়ম ভাঙার জন্য অপরাধীকে কারাগারে যেতে হয়েছে।

 

চুম্বক অংশ সাংবাদিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমজনতার কাছে স্বাধীনতার অর্থ কী, সে বিষয়ক বক্তব্য বছরের অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে স্বাধীনতা দিবসের সংবাদে বেশি প্রাসঙ্গিক। স্বাধীনতার স্মারক স্মৃতিসৌধের দিকে একটি শিশুর তাকিয়ে থাকার ছবি একটি অর্থবহ প্রতীক, যা সংবাদটিকে সমৃদ্ধ করে। গণমাধ্যমের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো একটা ভুলই করেছিলো, সেটা হলো ছবিটি সরিয়ে ফেলা।

 

র‍্যাবের যে এগারো সদস্য জেসমিনকে বেআইনিভাবে অপহরণ করেছে এবং যার ফলে শেষ পর্যন্ত জেসমিন মারা গেছেন, তাদেরকে এখনও আটক করা হয়নি। তারা, কিংবা এর নেপথ্যে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা কাউকেই এমনকি অভিযুক্তও করা হয়নি।

 

শামসের ক্ষেত্রে একমাত্র যারা আইন ভেঙেছেন তারা হলেন সেই আইনপ্রয়োগকারীরা, যারা এই সাংবাদিককে যথাযথ প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে অপহরণ করেছেন। যদিও সাদা পোশাকে থাকা অপহরণকারীদের দাবি ছিলো, তারা ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের লোক, তারপরও সিআইডি এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শামসকে আদালতে হাজির করায় তাদের ব্যর্থতা এবং শামসকে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে দিতে তাদের অপারগতা নিঃসন্দেহে আদালতের নির্দেশের লঙ্ঘন। অপহরণের এই ঘটনাটি সম্বন্ধে সরকারের মন্ত্রীদের না জানার ভান করা এবং স্পষ্টত গোঁজামিল থাকা একটি এজাহারের (এফআইআর  বা ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) ভিত্তিতে এই সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে তাদেরও দায়ভার রয়েছে। ন্যায়বিচারের এই ব্যত্যয়ের জন্য বরং নিরাপত্তা রক্ষা ব্যবস্থা এবং আইন মন্ত্রণালয়কে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

 

সংযুক্ত ছবিটি ২০২১ সালের নভেম্বরে শাহবাগে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে তোলা। কয়েকজন প্রতিবাদকারী একটি ব্যানার ধরে রেখেছেন এবং পতাকা ওড়াচ্ছেন। ডজনখানেক নাম না জানা প্রতিবাদকারীকে ঘিরে রেখেছে বিস্ময়কর রকমের বিপুল সংখ্যার পুলিশ (যাদের অনেকেই সশস্ত্র)-- এই ছবিটি আমাদের শাসকদের যে আতঙ্ক ঘিরে রেখেছে তাকে তুলে ধরে। সম্ভবত ২০২৩ সালের একটি ঘটনা নিয়ে লিখতে গিয়ে ২০২১ সালের ছবি ব্যবহার করার দোষে এই লেখাটিও অভিযুক্ত হবে। কিংবা বলা হতে পারে, শাহবাগ সাভার থেকে অনেক দূরে। কিন্তু  প্রতীক হিসেবে এর তাৎপর্য অস্বীকার করাটা কঠিন। জনগণের মুখোমুখি না হয়ে যে সরকার পুলিশের পেছনে লুকিয়ে থাকে, তা এরই মধ্যে নিজের অবস্থান হারিয়েছে।

 

 

আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসে অবস্থিত এসমা। এককালের এই নির্যাতন কেন্দ্রটিকে এখন পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে। ছবি: Argentina.gob.ar.

 

 

 

আমি বাংলাদেশের লোক- এ কথা শোনার পর ফুটবল পাগল আর্জেন্টিনিয়ানদের মুখের হাসি একটা দেখার মতো ব্যাপার ছিলো। বাংলাদেশের মাটিতে মেসির আবারও খেলার সম্ভাবনা এবং ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের আশা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারীরা সযত্নে লালন করছেন। স্বভাবতই তারা ভুলে গেছেন যে,  সেই ১৯৮৩ সালে জর্জ রাফায়েল বিদেলার পতনের পর আর্জেন্টিনিয়ানরা তাদের পূর্বতন নির্যাতন কেন্দ্রগুলোকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেছে। আমি প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছি এসমা-তে, অর্থাৎ the Space for Memory and for the Promotion and Defense of Human Rights এ। হয়তো আমাদের এখানকার আয়নাঘরও (গোপন নির্যাতন কেন্দ্র) একদিন রাষ্ট্রের দমন-পীড়নের স্মৃতি সংরক্ষণের জাদুঘরে পরিণত হবে, আর আমরা সেখানে মানবাধিকার বিষয়ক বৈশ্বিক ফোরামের আয়োজন করবো।

 

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা একটা নিয়মিত চর্চা। আশেপাশে তাকিয়ে মানুষ ফিসফিস করে কথা বলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার আগে তারা দুবার ভাবে। এই ভয়ের আবহাওয়া ক্রমশ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে (ইসরায়েলি স্পাইওয়ারের সাহায্যে) এবং আমরা তা জানি। তবে আরেক ধরনের ভয়ের অস্তিত্বও আছে এখানে, যা নিয়ে কথাবার্তা হয় না। সেই ভয় হলো শাসকদের সকলের সামনে উন্মোচিত হয়ে যাওয়ার এবং পাবলিক পরিসরে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের শিকার হওয়ার ভয়। এই সরকার গণমাধ্যমের কাছ থেকে সাংবাদিকতার বদলে দাসত্ব প্রত্যাশা করে, সাংবাদিকরা এখানে পরস্পরের সঙ্গে কোন্দলে লিপ্ত থাকে, আর সরকারের বিপরীতে সামান্যতম কিছু বলা হলেও সরকার চরম ব্যবস্থা নিতে তৈরি থাকে। বৈধতা এবং জনসমর্থনের অভাবের ভারটা বিপুল, যার ফলে সত্য হয়ে ওঠে এক ভয়াল শত্রু। তাদের এই বিকারগ্রস্ত আতঙ্কের দাম চোকাচ্ছি আমরা নাগরিকেরা।

 

 

শহিদুল আলম

একজন আলোকচিত্রী, মানবাধিকার কর্মী এবং দৃক পিকচার লাইব্রেরী, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট ও মেজরিটি ওয়ার্ল্ড এর প্রতিষ্ঠাতা

মূল ইংরেজি লেখাটি ০৩ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে নিউ এজ পত্রিকায় প্রকাশিত। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন দীপান্বিতা কিংশুক ঋতি।

Your Comment