বৃহঃস্পতিবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Thursday 28th March 2024

বৃহঃস্পতিবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Thursday 28th March 2024

আন্তর্জাতিক মধ্যপ্রাচ্য

ইরান: একদিনে জ্বলে ওঠেনি বিক্ষোভের দাবানল

২০২২-০৯-২৬

দীপান্বিতা কিংশুক ঋতি

[ ১. হিজাব ঠিকভাবে না পরার কারণে তেহরানে ধর্মীয় পুলিশের হাতে আটক হন মাহসা আমিনি। এরপর হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও পুলিশ দাবি করে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

২. ইরানে পোশাকের কারণে আটক ও নির্যাতনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। সম্প্রতি জুলাই মাসে লেখক ও শিল্পী সেপিদেহ রাশনোকে দুমাসেরও বেশি সময় ধরে আটক করে রাখা হয়। টেলিভিশনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় তাঁকে।

৩. ১৯৭৯ সালের পর থেকে শুধু পোশাকের ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষা, বিয়ে, ভ্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছেন নারীরা।

৪. মাহসার মৃত্যুতে ইরানের ত্রিশটিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিক্ষোভের কেন্দ্রে আছেন নারীরা। তাঁরা প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন, চুল কেটে ফেলছেন। এর মধ্যেই মারা গেছেন ৩৫জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী।

৫. ইরানের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা বিক্ষোভ করছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সামনেও বিক্ষোভ হয়েছে।]

 

 

হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় মাহসা আমিনি। ছবি: ডয়চে ভেলে

 

 

রাশনো ও আমিনি: জীবিত ও মৃত

আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে কুর্দিস্তান থেকে পরিবারের সঙ্গে তেহরানে এসেছিলেন ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি। কালো কোট ও স্কার্ফ পরে থাকার পরেও যথাযথভাবে হিজাব না পরার কথিত অপরাধে তাঁকে রাস্তা থেকে ভ্যানে তোলে ইরানের ধর্মীয় পুলিশ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্রে’। আমিনি গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁর বাবা-মাকে জানানো হয় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরো কয়েক ঘণ্টা পরে বলা হয়, তিনি ব্রেইন ডেড। গত শুক্রবার তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মাহসার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও তেহরান পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, পুনর্শিক্ষা কেন্দ্রে থাকার সময়ে আমিনির হৃদযন্ত্রে হঠাত সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান।

 

 

মাহসা আমিনির মৃত্যুতে ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। ছবি: টাইম

 

 

মাহসার মৃত্যুর দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইরান সরকার। তারা দাবি করেছে নির্যাতনের কারণে মাহসার মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু এভাবে পার পাওয়া যায়নি। এই মৃত্যু হাজার হাজার ইরানি নারীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এই নারীরা এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার মধ্যেই ইরানের ধর্মীয় রক্ষাকর্তাদের করাল চেহারা চাক্ষুষ দেখে নিয়েছেন তাদের দৈনন্দিন বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে। আমিনির ঘটনা ইরানের আইন প্রয়োগ ব্যবস্থাকে আবারও আলোচনায় নিয়ে এসেছে, যে আলোচনা প্রশ্নবিদ্ধ করছে এই পুরো ব্যবস্থাকেই।

 

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ গবেষক তারা সেপেহরি ফার এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইরানে। তিনি এ বিষয়ে বলেন, “ইরানে গড়পড়তা এমন কোনো নারী বা এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁদের এই ধর্মীয় পুলিশ এবং পুনর্শিক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। এগুলো এতোটাই সর্বব্যাপী।”

 

ইরানে গড়পড়তা এমন কোনো নারী বা এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাঁদের এই ধর্মীয় পুলিশ এবং পুনর্শিক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। এগুলো এতোটাই সর্বব্যাপী।

 

ফার আরো জানান, এই ধর্মীয় পুলিশ হলো এমন একটি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী যাদের ক্ষমতা, অস্ত্র এবং শাস্তি কেন্দ্র ব্যবহার করার এখতিয়ার আছে। রাষ্ট্রের শিষ্টতা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কেউ মেনে চলছে না বলে মনে হলে তাদেরকে এসব শাস্তি কেন্দ্রে নিয়ে আসা নয়। অধিকাংশ সময়ে নারীদের, এবং কখনও কখনও পুরুষদেরও তুলে আনা হয় রাস্তাঘাট বা বিপণি বিতান থেকে। কেন্দ্রের ভেতর আটক ব্যক্তিদের ইসলাম এবং হিজাবের গুরুত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হয়। শেষে মুক্তি দেওয়ার আগে তাঁদেরকে বাধ্য করা হয় রাষ্ট্রের পোশাক সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলার অঙ্গীকার করে একটি মুচলেকা সই করতে।

 

শালীনতা রক্ষায় টহলদারির এই কুখ্যাত ধর্মীয় পুলিশ বাহিনী কাজ করে সদাচারে উৎসাহ ও পাপ প্রতিরোধের সদর দফতর এই রাশভারী নামের একটা সংস্থার অধীনে। নারীরা হিজাব সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অমান্য করছেন কিনা তা তত্ত্বাবধান করার জন্য জায়গায় জায়গায় নজরদারির ব্যবস্থা বসানো রয়েছে। মাহসা আমিনির আগেও বহু নারী এসব কেন্দ্রে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক উদাহরণের মধ্যে সেপিদেহ রাশনোর কথা বলা যায়। এ বছরের ১২ জুলাই জাতীয় হিজাব ও পবিত্রতা দিবস এর সূচনা হওয়ার পর যেসব নারী গ্রেফতার হন, রাশনো তাঁদেরই একজন।

 

 

আটক হওয়ার আগে ও টেলিভিশনে ক্ষমা প্রার্থনার সময়ে সেপিদেহ রাশনো। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

 

 

“অশালীন পোশাক” পরার অপরাধে ২৮ বছর বয়সী লেখক ও শিল্পী রাশনো এ বছরের জুলাই মাসে বাসের কিছু সহযাত্রীর দ্বারা হয়রানির শিকার হন। তাঁর এই নিগৃহীত হওয়ার ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট নিউজ এজেন্সি নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণের জন্য তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপরে টেলিভিশনে তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেও বাধ্য করা হয় স্পষ্টই নির্যাতনের ফলে রাশনো ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছেন। মানবাধিকারকর্মী স্কাইলার থম্পসন মনে করেন, মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি রাশনো শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন। টেলিভিশনে ক্ষমা প্রার্থনার সময়ে রাশনোকে অসুস্থ ও বিবর্ণ দেখাচ্ছিলো, চোখের কোণে ছিলো কালি। থম্পসনের মতে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এদিকে নজর দিতে হবে, কেননা ইরানে এসব ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

“অশালীন পোশাক” পরার অপরাধে ২৮ বছর বয়সী লেখক ও শিল্পী রাশনো এ বছরের জুলাই মাসে বাসের কিছু সহযাত্রীর দ্বারা হয়রানির শিকার হন। তাঁর এই নিগৃহীত হওয়ার ফুটেজ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্ট নিউজ এজেন্সি নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণের জন্য তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপরে টেলিভিশনে তাঁকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেও বাধ্য করা হয় স্পষ্টই নির্যাতনের ফলে রাশনো ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছেন।

 

মানবাধিকারকর্মী তারা সেপেহরি ফার মনে করেন, এই ক্ষমা প্রার্থনাকে ঐচ্ছিক হিসেবে দেখানোর কোনো চেষ্টাও করা হয়নি। এমনকি এরপরেও রাশনোকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। দুমাসেরও বেশি সময় পরে গত ৩০ আগস্ট অস্থায়ী জামিনে তিনি ছাড়া পান। রানা হিউম্যান রাইটস গ্রুপের তথ্য থেকে আরো জানা যায়, ১২ জুলাইয়ের আগে-পরে একই কারণে মোট পাঁচজন নারীকে আটক করা হয়, যাঁদের মধ্যে চারজনকে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া, এ সময়ে ৩৩টি হেয়ার কেয়ার স্যালন বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৭০০র মতো নারীকে হিজাব সংক্রান্ত কারণে শাস্তি কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

 

ইরানের ধর্মীয় পুলিশ: কোথা থেকে কেমন করে এলো

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই ইরানে নানাভাবে ধর্মীয় পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। ১৯৩৬ সালের ৮ জানুয়ারি পাহলভী বংশের প্রথম শাসক রেজা শাহ পাহলভী (১৮৭৮-১৯৪৪) কাশফ-এ-হিজাব নামে এক ডিক্রি জারি করেন, যার হুকুম মোতাবেক নারীদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়। ইরানের এই শাহরা বিশেষকরে পশ্চিমা তোষণ এবং তেল সম্পদের অবাধ লুণ্ঠনের জন্য ভয়াবহ অজনপ্রিয় ছিলেন। ভয়াবহ লুণ্ঠন, গোপন পুলিশের নির্যাতন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এই শাসকরা নিজেদের বৈধতা তৈরি করতে চেষ্টা করতেন আধুনিকতার নামে। ফলে এই চাপিয়ে দেয়া আধুনিকতা ইরানের সাধারণ মানুষের মাঝে আবেদন তৈরি করতে পারেননি, বরং তাদের অনেকেই খনিজ সম্পদের ওপর বিদেশী নিয়ন্ত্রণ ও দেশীয় শাসকদের নির্যাতনের প্রতীক হিসেবেই দেখতেন অভিজাত অংশের মাঝে জনপ্রিয় পশ্চিমা সংস্কৃতিকে। সে সময়ে কোনো কোনো নারী এই ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে হিজাব পরে বাড়ির বাইরে বের হতেন। এভাবে আরও অনেকগুলো কারণের সাথে হিজাব পড়তে না দেয়ার ধর্মীয় এই নিপীড়নও তৎকালীন ইরান সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষের একটি কারণ ছিল। বহুজাতিক কোম্পানির খনিজ সম্পদ লুণ্ঠণ, ক্ষমতাধরদের দুর্নীতি ও অপব্যয় এবং গোপন পুলিশ সাভাকের নির্যাতনের সাথে তাই বহুক্ষেত্রেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপকে মিলিয়ে দেখতেন ইরানের জনগণের একটা বড় অংশ।

 

এরপর ১৯৭৯ সালে ক্ষমতায় আসেন ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রথম শাসক রুহুল্লাহ খোমেনি (১৯০২-১৯৮৯), যিনি আয়াতোল্লাহ খোমেনি নামেই অধিক পরিচিত। রেজা শাহ পাহলভীর উল্টো নিয়ম চালু করেন তিনি, যার ফলে হিজাব ছাড়া বাড়ির বাইরে পা দেওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

 

হিজাবকে খোমেনি ব্যবহার করেন বিপ্লবের একটি প্রতীক হিসেবে, এবং ‘শাহ এর শাসনের প্রতি নারীরা মার্জিতভাবে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করায়’ নারীদের অভিবাদন জানান। ইরানের নারীরা তখনো ভাবেনইনি, মত প্রকাশের অধিকারের জন্য পোশাকের যে স্বাধীনতা তাঁরা চেয়েছিলেন, তা অচিরেই আবারও বাজেয়াপ্ত হতে চলেছে নতুন শাসনে, এবং বহুগুণ নিপীড়ক চেহারা নিয়ে।

 

হিজাবকে খোমেনি ব্যবহার করেন বিপ্লবের একটি প্রতীক হিসেবে, এবং ‘শাহ এর শাসনের প্রতি নারীরা মার্জিতভাবে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করায়’ নারীদের অভিবাদন জানান। ইরানের নারীরা তখনো ভাবেনইনি, মত প্রকাশের অধিকারের জন্য পোশাকের যে স্বাধীনতা তাঁরা চেয়েছিলেন, তা অচিরেই আবারও বাজেয়াপ্ত হতে চলেছে নতুন শাসনে, এবং বহুগুণ নিপীড়ক চেহারা নিয়ে।

 

তখনও বিষয়টি না ভাবলেও অচিরেই নারীদেরকে এ বিষয়টি ভাবতে হয়, যার ফলে ১৯৭৯ সালের ৮ মার্চ ১০০০০ এরও বেশি নারী ইরানের রাজধানীতে জড়ো হন। তাঁদের এই জমায়েতের উদ্দেশ্য ছিলো নতুন ইসলামী সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। নতুন এই নীতি অনুযায়ী বাড়ির বাইরে পা রাখলেই নারীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরতে হতো।

 

 

১৯৭৯ সালে নতুন ইসলামী সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব নীতির বিরুদ্ধে নারীদের প্রতিবাদ। ছবি: মাই স্টিলদি ফ্রিডম

 

বিপ্লব পরবর্তী ইরানের প্রথম ধর্মীয় পুলিশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাসিজ নামের একটি আধাসামরিক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী। বাসিজ মূলত গঠিত হয়েছিলো ইরান-ইরাক (১৯৮০-১৯৮৮) যুদ্ধে যোগদানের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে। এটি ছাড়াও যেসব গ্রুপ এমনকি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলো না, সেগুলোও নিজেদের মত করে ধর্মীয় পুলিশের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। বর্তমানে ইরানে ধর্মীয় পুলিশ হিসেবে পরিচিত গাশত-এ-এরশাদ বা সদাচার রক্ষায় টহলদারি দলের সদস্যরা সাধারণত ভ্যানে করে টহল দেয়।

 

সেইসব টহল ভ্যানে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি চাদরাবৃত নারী সদস্যদেরও দেখা যায়। এদের কাজ বিপণি বিতান বা সাবওয়ে স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় দাঁড়িয়ে তদারকি করা কোন কোন নারী তাঁদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘যথার্থভাবে’ হিজাব পরেননি, বা পোশাকের আইন ভেঙেছেন। কোনটি শালীন আর কোনটি নয়, তা নির্ভর করে টহল দলের উপস্থিত সদস্যদের ওপর মর্জির ওপর। এর মধ্যে ‘হিজাবের যথেষ্ট বড় না হওয়া’ থেকে ‘অতিরিক্ত প্রসাধন’ যেকোনো কিছুই পড়তে পারে। কাউকে তারা শিকার হিসেবে বেছে নিলে সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের ওপর শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক নিপীড়নের গজব নেমে আসে।

 

সেইসব টহল ভ্যানে পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি চাদরাবৃত নারী সদস্যদেরও দেখা যায়। এদের কাজ বিপণি বিতান বা সাবওয়ে স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় দাঁড়িয়ে তদারকি করা কোন কোন নারী তাঁদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘যথার্থভাবে’ হিজাব পরেননি, বা পোশাকের আইন ভেঙেছেন। কোনটি শালীন আর কোনটি নয়, তা নির্ভর করে টহল দলের উপস্থিত সদস্যদের ওপর মর্জির ওপর। এর মধ্যে ‘হিজাবের যথেষ্ট বড় না হওয়া’ থেকে ‘অতিরিক্ত প্রসাধন’ যেকোনো কিছুই পড়তে পারে। কাউকে তারা শিকার হিসেবে বেছে নিলে সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের ওপর শারীরিক, সামাজিক ও মানসিক নিপীড়নের গজব নেমে আসে।

 

 

ধর্মীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা লক্ষ্য রাখেন কোনো নারী ছোট হিজাব পরছেন কিনা। ছবি: বিবিসি

 

 

টহলদাররা যেসব নারীকে আটক করে, তাঁদেরকে হয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, নয়তো নিয়ে যাওয়া হয় ‘পুনর্শিক্ষা কেন্দ্র’ বা ‘সংশোধন কেন্দ্রে’। সেখানে তাঁদেরকে পোশাক কীভাবে পরতে হবে তা শেখানো হয়। নারীরা ছাড়া পাওয়ার সময়ে তাঁদের পুরুষ আত্মীয়কে তাঁদের জন্য ‘যথাযথ’ পোশাক নিয়ে আসতে হয়। গাশত-এ-এরশাদ এর মূল লক্ষ্য সাধারণত শহর এলাকার অপেক্ষাকৃত অবস্থাপন্ন ঘরের নারীরা, যাঁদের পোশাক আইন ভাঙার, এমনকি পশ্চিমা পোশাক পরার সম্ভাবনা বেশি। এমনকি পশ্চিমা ছাঁদের চুল থাকলে পুরুষরাও এদের রোষের শিকার হতে পারেন।

 

ফরাসি দার্শনিক লুইস অ্যালথুসার (১৯১৮-১৯৯০) তাঁর প্রবন্ধ ইডিওলজি অ্যান্ড ইডিওলজিক্যাল স্টেট অ্যাপারেটাস এ রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি মনে করেন, নাগরিকদের রাষ্ট্রের নিয়ম মানতে বাধ্য করার জন্য রাষ্ট্র প্রধানত দুই ধরনের পন্থা অবলম্বন করে, একটি মতাদর্শিক সমর্থন আদায় করা, অন্যটি বল প্রয়োগ বা নিপীড়নের মধ্য দিয়ে বাধ্য করা। প্রথমটিতে রাষ্ট্র তার কার্যকলাপের পক্ষে জনগণের একটা বড় অংশের মাঝ থেকে আদর্শিক সমর্থন আদায় করে্। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ম নাগরিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলেও এর ফলে নাগরিকরা নিয়ম মানতে বাধ্য হন। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র সরাসরি নাগরিকের ওপর বলপ্রয়োগ করে তাঁকে বিধিবদ্ধ আচরণে বাধ্য করে। ইরানের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্যণীয়। নারীরা হিজাব পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলেও রাষ্ট্র তাঁদেরকে তা করতে বাধ্য করছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে। ইরানে হিজাব পরার ইরানি বিষয়েও আদর্শিক সমর্থনের অভাব মেটানো হয় বলপ্রয়োগ বা নিপীড়নের মধ্য দিয়ে্।

 

এই টহলদারি ইরানের নাগরিকদের কাছে একটা উৎপীড়নের প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয় শহরকেন্দ্রিক অনেকগুলো জনপ্রিয় আন্দোলন এর আগে রক্তাক্ত পদ্ধতিতে দমন করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহুক্ষেত্রে প্রতিবাদও আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে দৈনন্দিন এই পীড়নকে এড়াতে, অর্থাৎ গাশত-এ-এরশাদ এর সামনে পড়ার সম্ভাবনা কমাতে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ইরানে জনপ্রিয়। অ্যাপটি ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে কোথায় কোথায় বাহিনীটির চেকপয়েন্ট আছে। এই অ্যাপ তৈরিতে যে তথ্য উপাত্ত প্রয়োজন, তা জনতার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে। যেসব এলাকায় টহল ভ্যান আছে, সেখানকার অ্যাপ ব্যবহারকারীরা জায়গাগুলো স্বেচ্ছায় বা স্বপ্রণোদিতভাবে চিহ্নিত করে দেন। বেশ কিছু ব্যবহারকারী একটি জায়গাকে চিহ্নিত করলে অ্যাপের অন্য ব্যবহারকারীরা জায়গাটি এড়িয়ে চলেন। এভাবে রীতিমতো ইঁদুর-বেড়াল খেলা চলে নৈতিকতার টহলদারদের সাথে নাগরিকদের।

 

 

১৯৭৯-২০২২: ইরানে নারীর অবস্থান

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রকাশ্য স্থানগুলোতে ইরানি নারীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরতে হয়। ১৯৭৯ সালেই খোমেনি মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৩তে নামিয়ে আনেন, ১৯৮২ সালে যা নেমে আসে ৯ বছরে। ২০০২ সালে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৩ ও ছেলেদের ১৫ করা হলেও এরপর থেকে নারীদের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপই হয়েছে। গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তাছাড়া স্বামী বা বাবার অনুমতি ছাড়া নারীরা ভ্রমণ করতে পারেন না। পুরুষরা মুখোমুখি তালাক দিতে পারলেও নারীদেরকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। নারীর পছন্দমতো পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রেও পরিবারের সদস্যরা বাধা দিতে পারেন। ভয়ভীতি বা চাপের মুখে আগের স্ত্রীদের অনুমতি আদায় করতে পারলে আইনসঙ্গতভাবে একজন পুরুষ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারলেও বৈবাহিক আইনে নারী অজস্র রকমের বৈষম্যের শিকার হন। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর বিয়ের জন্যও একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির দরকার হয়।

 

১৯৭৯ সালেই খোমেনি মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৩তে নামিয়ে আনেন, ১৯৮২ সালে যা নেমে আসে ৯ বছরে। ২০০২ সালে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৩ ও ছেলেদের ১৫ করা হলেও এরপর থেকে নারীদের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপই হয়েছে। গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তাছাড়া স্বামী বা বাবার অনুমতি ছাড়া নারীরা ভ্রমণ করতে পারেন না। পুরুষরা মুখোমুখি তালাক দিতে পারলেও নারীদেরকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। নারীর পছন্দমতো পেশা গ্রহণের ক্ষেত্রেও পরিবারের সদস্যরা বাধা দিতে পারেন। ভয়ভীতি বা চাপের মুখে আগের স্ত্রীদের অনুমতি আদায় করতে পারলে আইনসঙ্গতভাবে একজন পুরুষ চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারলেও বৈবাহিক আইনে নারী অজস্র রকমের বৈষম্যের শিকার হন। প্রাপ্তবয়স্ক নারীর বিয়ের জন্যও একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির দরকার হয়।

 

তাছাড়া, তালাকপ্রাপ্ত নারী আবার বিয়ে করলে তিনি সন্তানের অভিভাবকত্ব হারান। ২০১২ সালের আগে উচ্চশিক্ষায় রত মোট শিক্ষার্থীর ৬০ শতাংশই ছিলো নারী। কিন্তু সে বছর থেকে ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৭টি কোর্সে নারীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে কোনো সদুত্তর কারো কাছে পাওয়া যায়নি। দেশটিতে নারীদের সাক্ষরতার হারও পুরুষদের থেকে কম। ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের সাক্ষরতার হার ৯০.৩৫ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৮০.৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৮০ দশক জুড়ে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ে বাধ্য হয়েই নারীদের শিক্ষা, চাকরিতে অংশগ্রহণ প্রভৃতি বিষয়ে যে অগ্রগতি ঘটছিল, তা আর বজায় থাকেনি যুদ্ধের পর।

 

 

জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি। ছবি: এপি

 

এ বছরের ১৫ আগস্ট দেশটির রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি নতুন বাধ্যবাধকতাসহ এক পোশাক আইনের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যেসব নারী পোশাক আইন যথাযথভাবে মানবেন না, তাঁদের দুমাসের জেল বা ৫ লক্ষ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে, আবার ৭৪ ঘা চাবুকও খেতে হতে পারে। এছাড়া, নারী সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল ছবি ইসলামসম্মত না হলে তাঁদেরকে চাকরিচ্যুত করা হবে। এর আগে এ মাসেই পোশাক আইন ভঙ্গকারী নারীদের সহজে চিহ্নিত করার জন্য গণপরিবহনগুলোতে চেহারা চিনবার ফেসিয়াল রেকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সদাচারে উৎসাহ ও পাপ প্রতিরোধ বিষয়ক সদর দফতরের সভাপতি মোহাম্মদ সালেহ হাশেমি গোলপাইয়েগানি।

 

এ বছরের ১৫ আগস্ট দেশটির রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি নতুন বাধ্যবাধকতাসহ এক পোশাক আইনের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যেসব নারী পোশাক আইন যথাযথভাবে মানবেন না, তাঁদের দুমাসের জেল বা ৫ লক্ষ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে, আবার ৭৪ ঘা চাবুকও খেতে হতে পারে। এছাড়া, নারী সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল ছবি ইসলামসম্মত না হলে তাঁদেরকে চাকরিচ্যুত করা হবে

 

 

একদিনে জ্বলে ওঠেনি বিক্ষোভের দাবানল

নতুন হিজাব আইন, সেইসঙ্গে রাশনোর নিগ্রহ জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। রাশনো আটক থাকা অবস্থায় বিক্ষোভে নামেন ইরানের নারীরা। তিনি মুক্তি পাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে নারী অধিকারকর্মীরা “সেপিদেহ রাশনো কোথায়?” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে তেহরানে জড়ো হন। স্বীকারোক্তি নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন তাঁরা, যার ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

 

অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ এই গ্রেফতারকে দেখেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে। ২০১৪ সালের হোয়াইট ওয়েন্সডে মুভমেন্টের পথিকৃৎ ছিলেন আলিনেজাদ। সে বছরই ইরান ত্যাগ করেন তিনি। নিউ ইয়র্ক থেকে আলিনেজাদের গড়ে তোলা এ আন্দোলনে নারীরা দমনমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে সাদা স্কার্ফ অথবা সাদা পোশাক পরতেন। অনলাইনভিত্তিক আন্দোলন মাই স্টিলদি ফ্রিডম এর প্রবর্তকও মাসিহ আলিনেজাদ। এই দুটি আন্দোলন অফলাইন ও অনলাইনে নারীদের সোচ্চার হওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এর ফলে আলিনেজাদকে ২০২১ সালে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়। এ বছর জুলাই মাসে তাঁর নিউইয়র্কের বাড়ির সামনে থেকে একজন বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, ইরানি নারীদের কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা কেবল ইরানের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই।

 

এর ফলে আলিনেজাদকে ২০২১ সালে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয়। এ বছর জুলাই মাসে তাঁর নিউইয়র্কের বাড়ির সামনে থেকে একজন বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, ইরানি নারীদের কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা কেবল ইরানের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নেই

 

সেইন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলী আনসারি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, হিজাব সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কঠোরতর করাটা “দমনের বৃহত্তর কাঠামোর” অংশ। এই দমনমূলক ব্যবস্থা ২০২১ সালের আগস্টে রাইসি ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকটতর হচ্ছে। রাইসিকে মনে করা হচ্ছে তাঁর পূর্বসূরি হাসান রুহানির চাইতেও কট্টর। অর্থনৈতিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালীন সময়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তিনি ক্ষমতায় আসার পরে সদাচার তদারকি নামের পরিচিত ধর্মীয় পুলিশ আরো ক্ষমতাধর ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। পশ্চিমা প্রভাব হিসেবে সাব্যস্ত যে-কোনো আচরণকে কঠোরভাবে দমন করে এই বাহিনী, আর সরকারের স্বার্থের বিপক্ষে যায়, এমন যে কোন কিছুকে পশ্চিমা প্রভাব হিসেবে দেখানোর চর্চাটা ইরানে বেশ প্রচলিত।

 

সেপিদেহ রাশনোকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে হওয়া আন্দোলনের বিষয়ে আনসারি বলেন, “রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠছে। নারীদের বিক্ষোভকে দেখা হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে। এর কারণ, এর মধ্য দিয়ে সমাজের প্রচলিত প্রথার ফাটল চোখে পড়ে।” এই বিষয়টি মাহসা আমিনির মৃত্যুতে শুরু হওয়া নারীদের বিক্ষোভের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার প্রমাণ পাওয়া যায় আন্দোলনকারীদের দিকে তাকালে।

 

ইরানে ইসলামী শাসনের কট্টর সমর্থক ফাতেমেহকে দেখা যায় কালো চাদর পরিহিত অবস্থায় আন্দোলনস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে। ৫৩ বছর বয়সী ফাতেমেহর ভাই ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তাঁর স্বামী এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডসের একজন সদস্য। তবুও আমিনির মৃত্যুর পর ফাতেমেহ মনে করছেন, নারীদেরকে আর হিজাব পরতে বাধ্য করা উচিৎ নয়, বরং এই বেছে নেয়ার অধিকার নারীদের দেয়া উচিত, বিচারের ভারও সৃষ্টিকর্তার ওপরই ছাড়া উচিত। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেন, “আমিনির মৃত্যুর ঘটনার পর অবশ্যই হিজাব আইন সংশোধন করা উচিৎ। আমার মতো যাঁরা ধার্মিক, তাঁদের উচিৎ কেবল আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা এবং আশা করা, নারীরা নিজ থেকেই হিজাব বেছে নেবেন।”

 

ইরানে ইসলামী শাসনের কট্টর সমর্থক ফাতেমেহকে দেখা যায় কালো চাদর পরিহিত অবস্থায় আন্দোলনস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে। ৫৩ বছর বয়সী ফাতেমেহর ভাই ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং তাঁর স্বামী এলিট রেভল্যুশনারি গার্ডসের একজন সদস্য। তবুও আমিনির মৃত্যুর পর ফাতেমেহ মনে করছেন, নারীদেরকে আর হিজাব পরতে বাধ্য করা উচিৎ নয়, বরং এই বেছে নেয়ার অধিকার নারীদের দেয়া উচিত, বিচারের ভারও সৃষ্টিকর্তার ওপরই ছাড়া উচিত

 

 

ইরানে বিক্ষোভের আগুন। ছবি: মিডল ইস্ট আই

 

 

কেউ কেউ চলমান ঘটনাপ্রবাহকে দেখছেন ‘ইরানের জর্জ ফ্লয়েড মুহূর্ত’ হিসেবে। সংস্কারপন্থী রাজনীতিবিদ ও প্রাক্তন সংসদ সদস্য মাহমুদ সাদেঘি টুইট করেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনেই এর ভূমিকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে। “যে সর্বোচ্চ নেতা জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছিলেন, তিনি এখন মাহসা আমিনির প্রতি ইরানি পুলিশের ব্যবহার নিয়ে কী বলবেন?”

 

 

চুল কেটে পতাকার মতো উড়িয়ে দিয়েছেন ইরানের নারীরা। ছবি: মানিমেকালাই/ টুইটার

 

 

৩০টিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলন। বিক্ষোভকারী নারীরা মাথা না ঢেকে রাস্তায় নামছেন, গান গাইছেন, নাচছেন, হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন, লম্বা চুল কেটে ফেলে দিচ্ছেন, আবার তা দিয়ে পতাকা বানিয়ে ওড়াচ্ছেন। আয়াতোল্লাহ খোমেনি এবং কাসেম সোলায়মানির ছবি পোড়াচ্ছেন তাঁরা। স্লোগান দিচ্ছেন, “ধর্মীয় পুলিশ মুর্দাবাদ”, “নারী, জীবন, মুক্তি” ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা। এর মধ্যেই ৪১ জনের বেশি বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, আন্দোলনকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও গুলি ছোঁড়া হয়েছে। সরকার অবশ্য বলছে, আন্দোলনে উস্কানি দিতে বিরোধী দল বিক্ষোভকারীদের হত্যা করছে। আমিনির পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানিয়েছে সরকার, প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সুষ্ঠু তদন্তের।

 

এই আন্দোলনের ফল কী হবে সেটা বলা খুব মুশকিল। তবে মানুষ যেভাবে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদেরকে পাল্টা শারীরিক আঘাত করছেন, তেমন দৃশ্য ইরানে খুব কমই দেখা গেছে নিকট অতীতের আন্দোলনগুলোতে। এখন পর্যন্ত প্রতিটা শহরেই আন্দোলন টিকে আছে প্রত্যাঘাত করে এবং রাস্তার ওপর জনগণের দখল বজায় রেখে। ফলে আশু ফলাফল যাই হোক, এই আন্দোলন যে ইরানের সমাজের ওপর দীর্ঘ একটি প্রভাব রেখে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। এমনকি, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস দমন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাববলয়কে বৃদ্ধির জন্য ইরানের জনপ্রিয় নায়ক হিসেবে পরিচিত কাশেম সোলাইমানির— যিনি ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন— ছবিও উত্তেজিত জনতা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কাশেম সোলাইমানী ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রভাবশালী জেনারেল ছিলেন, এবং বর্তমান শাসকদের মাঝে অতি প্রভাবশালীও ছিলেন। এই সবকিছুই ইরানী সমাজে নতুন সামাজিক বিন্যাসের এবং পুরনো শাসকদের অজনপ্রিয় হয়ে উঠবার ইঙ্গিত দেয়।

 

 

নারী নেতৃত্বের অভ্যুদয়, আন্তর্জাতিক সংহতির প্রকাশ

ইরানের এই আন্দোলন দেশটির প্রধান সবগুলো নগরেই ছড়িয়ে পড়েছে। নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে এই আন্দোলনে ঢলের মত যোগদান করছেন। তবে এই আন্দোলনের একটা বড় দিক হলো নারী নেতৃত্বের সামনে আসা। এটা ইরানের ইতিহাসে প্রথামবার ঘটেছে। যদিও শাহবিরোধী যে আন্দোলন ইরানে সফল হয়ে খোমেনির শাসনকে কায়েম করেছিল, সেটিও সফল হয়েছিল নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের সূত্রেই।

 

প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক, প্রবাসী ইরানী পণ্ডিত  আজাদেহ কিয়ান বলেন, “এই আন্দোলনের ব্যাপারে যা অভূতপূর্ব তা হলো, নারীরা এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক স্থবির অবস্থা। কিন্তু এবারের আন্দোলন কেবলই দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নয়, বরং নারীর অধিকার নিয়েও। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।”

 

এই আন্দোলনের ব্যাপারে যা অভূতপূর্ব তা হলো, নারীরা এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো অর্থনৈতিক সঙ্কট, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক স্থবির অবস্থা। কিন্তু এবারের আন্দোলন কেবলই দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নয়, বরং নারীর অধিকার নিয়েও। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন

 

ইরানের ভেতরে বিক্ষোভ তো চলছেই, সেইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ইরানের ধর্মীয় পুলিশ ও রীতিনীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। মাহসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে জনআন্দোলনের সময়টিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিবষদের অধিবেশন চলেছে। ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে যোগ দিতে সেখানে অবস্থান করছিলেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ইব্রাহিম রাইসির হোটেল ও জাতিসঙ্ঘের সদর দপ্তরের সামনে নতুন উদ্যমে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারী সঞ্চালক রাইসির ইন্টারভিউ নেওয়ার সময়ে মাথায় কাপড় দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাইসি ইন্টারভিউ বাতিল করে দেন। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামেন।

 

 

আমিনির ছবি হাতে বৈরুতে লেবানিজ ও ইরানি নারীদের সমাবেশ। ছবি: ভোয়া নিউজ

 

 

অর্গানাইজেশন অব ইরানিয়ান-আমেরিকান কমিউনিটিজ এর উপদেষ্টা ডক্টর রমেশ সেপেহরাদ বলেন, “২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির বর্বরোচিত হত্যার বিষয়ে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না, থাকা উচিতও নয়।” ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ রেজিস্ট্যান্স অফ ইরানের নির্বাচিত সভপতি মারিয়াম রাজাভি বলেন, “মিস আমিনির মৃত্যু বিদ্রোহী শহরগুলোর আগুনে ঘি ঢেলেছে।” জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ইব্রাহিম রাইসির আসন্ন বক্তব্য সম্বন্ধে মারিয়াম  বলেন, “বিশ্বের দেশগুলোকে যে ভবনের রক্ষা করার কথা, সেই ভবনে এই খুনীর পা রাখার মুহূর্তটি সারা বিশ্বে যাঁরা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে প্রশমন করার চেষ্টা করছেন তাঁদের জন্য একটি লজ্জা ও গ্লানির মুহূর্ত। এই মুহূর্তটি মানবতার বিবেককে ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া একটি মুহূর্ত।” জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আমিনির মৃত্যু ও নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

 

 

মাহসির জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে বার্লিনের ইরান এম্বেসির সামনে সমাবেশ। ছবি: এপি

 

 

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের খেলায় ইরানের প্রধান প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট মাহসা হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেছেন, “‘সঠিকভাবে’ হিজাব না পরার অপরাধে পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যু মানবাধিকারের ওপর এক ভয়ঙ্কর ও মর্মান্তিক আঘাত। কোনোরকম সহিংসতা বা হয়রানির মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই ইরানে নারীদের যা খুশি তা পরতে পারা উচিৎ। নারীদের ন্যূনতম স্বাধীনতা চর্চার লক্ষ্যে ইরানকে অবশ্যই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।” মাহসার পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।

 

কিন্তু ইরানের যে কোন একটি আন্দোলন দমন করার বেলায় যেমন সেটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সৌদি আরবের উস্কানি ও চর হিসেবে দেখানোর চেষ্টা ইরানের শাসকদের দিক থেকে সব সময়েই জারি থাকে। রাজনৈতিক সুবিধার জায়গা থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের প্রধান প্রতিপক্ষ ইরানে এমন একটা আন্দলনের বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র সঙ্গত কারণেই অত্যন্ত আনন্দিত। কিন্তু একইসাথে বলা যায় দুনিয়া জুড়ে নাগরিকদের প্রতিবাদের মাঝে যেমন নারীর ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রকাশ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভূমিকা ততটা নারীর প্রতি সহানুভূতি থেকে নয়। বরং প্রায় একই ধরনের, কিংবা আরও উগ্র নারী বিরোধী আইন, রীতি ও প্রথা মধ্যপ্রাচ্যেরই অপরাপর দেশে চালু থাকলেও সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক প্রয়োজন ছাড়া নীরব থাকটাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি।

 

একই কারণে যে কোন প্রশ্নে ইরানের চরম বিরোধী সৌদি আরব ও তার মিত্ররাও এই আন্দোলন প্রশ্নে ভূমিকা গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছেন। ইরানের কোন কোন নেতৃত্ব যদিও এর মাঝেই আন্দোলনকারীদের মাঝে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশগুলোর ইন্ধন প্রচার করেছেন, সৌদি আরবের দিক থেকে কোন আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এই রচনা পর্যন্ত আসেনি। এর কারণটা খুবই অনুমেয়। ইরানের সাথে সৌদি আরবের যতই শত্রুতা থাকুক এবং সৌদি আরবে সাম্প্রতিককালে যতটুকুই নারীর প্রতি উদারতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হোক, সাধারণভাবে দেশটির নারীদের অবস্থান ও আইনী অধিকারের পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ। ফলে ইরানের বর্তমান নারীর আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে নিজেদের দেশে এমন পরিস্থিতি ডেকে আনার বা এমন আন্দোলনে বৈধতা দেয়ার কোন কারণ সৌদি ও তার মিত্র জোটের নেই।

 

ইরানের সাথে সৌদি আরবের যতই শত্রুতা থাকুক এবং সৌদি আরবে সাম্প্রতিককালে যতটুকুই নারীর প্রতি উদারতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হোক, সাধারণভাবে দেশটির নারীদের অবস্থান ও আইনী অধিকারের পরিস্থিতি ভয়াবহ খারাপ। ফলে ইরানের বর্তমান নারীর আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে নিজেদের দেশে এমন পরিস্থিতি ডেকে আনার বা এমন আন্দোলনে বৈধতা দেয়ার কোন কারণ সৌদি ও তার মিত্র জোটের নেই।

 

তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বাইরের রাষ্ট্র ও শক্তিগুলোর ভূমিকা যাই হোক না কেন, এই আন্দোলনের এখন পর্যন্ত বিস্তৃতি ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছে যে এই আন্দোলনটি ইরানের জনগণের ভেতর থেকেই উঠে এসেছে, এবং এটা তাঁদেরই আন্দোলন। বাইরের সমর্থন বা অসমর্থন দিয়ে এর গণভিত্তিকে পরিমাপ করা যাবে না।

 

 

শেষ কথা

কী ধরনের পোশাক পরা উচিৎ, তা নিয়ে ভিন্নমতের অন্ত নেই। অন্য সব বিষয়ের মতো এ বিষয়েও নানা মুনির নানা মত থাকবে- সেটিই স্বাভাবিক। যা অস্বাভাবিক তা হলো, নিজের পছন্দমতো অপরকে চলতে বাধ্য করা। পোশাকের ভিন্নতার কারণে নারীকে হয়রানির ঘটনা এই প্রথম নয়, তবে মাহসার মৃত্যুর নৃশংসতা বিপুল সংখ্যক মানুষকে ক্রোধান্বিত করে তুলেছে। আশা করা যায়, এই ক্রোধের ফলে ইরানের নারীরা তাঁদের পছন্দমতো পোশাক পরার স্বাধীনতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবেন- সেটি হিজাব পরে হোক, বা না পরে। শাহের আমলে তাদের ওপর জোর পূর্বক আধুনিকতা চাপিয়ে দেয়া বা খোমেনির আমলের হিজাব পড়তে বাধ্য করা, উভয়টিই নিপীড়ক রাষ্ট্রেরই প্রতিচ্ছবি। ইরানের জনগণ এই নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাক, ইরানের নারীরা নিজেদের শরীর, মতাদর্শ ও জীবনকে বাছাই করার সুযোগ পাক, এটা যে কোন গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষের ন্যূনতম অবস্থান।

 

 

তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, ফার্স্টপোস্ট, রয়টার্স, লাইভমিন্ট, দ্য নিউ আরব, ইনডিপেনডেন্ট, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ওয়েবসাইট, আরব নিউজ, ভোয়া নিউজ।