গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে সম্প্রতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থীর হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী মাত্র ছয় বছরে ১৬০টি গবেষণা প্রকাশ করেছেন; এবং এগুলো বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশও করেছেন। চৌর্যবৃত্তি প্রমাণ হবার পরেও এইসব জার্নাল থেকে গবেষণাগুলো এখনো সরিয়ে নেয়া হয়নি! আসলে চুরি করা কিংবা দুর্বল গবেষণা ছাপাবার সংস্কৃতির সূত্রপাতটা আসলে এইসব জার্নাল থেকেই।
আধুনিক বিদ্যায়তনিক জগতে জার্নাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ। জার্নালের মাধ্যমে একজন গবেষক একদিকে তার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন, অন্যদিকে এসব গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের নির্যাস ছড়িয়ে পরে অন্যদের মাঝে। মানসম্পন্ন জার্নালের লেখা রেফারেন্স হিসেবেও বারংবার ব্যবহৃত হয়, এভাবে জ্ঞান জগতে গবেষকরা স্বীকৃত হন, তৈরি হয় তাদের কাজের মর্যাদা এবং গবেষক ও পণ্ডিত হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে যায়।
গবেষকদের নিরন্তর সাধনা সার্থক করতে সেসব গবেষণা প্রকাশের বিকল্প নেই। কিন্তু এখানেই বড় ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। গবেষণাপত্র প্রকাশের নামে এসব ব্যবসায়ীরা তৈরি করেছেন কিছু নাম সর্বস্ব জার্নাল, যাদের একমাত্র লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নেয়া। বিশেষজ্ঞরা এসব জার্নালের নাম দিয়েছেন প্রিডেটরি জার্নাল বা শিকারী জার্নাল। জেনে কিংবা না জেনে অনেকেই এইসব শিকারী জার্নালগুলোর ফাঁদে পা দিচ্ছেন…
এসব জার্নাল চিনতে ও সেখানে পেপার পাবলিশের পরিণতি নিয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কাজ করছে ন্যাশনাল ইয়াং একাডেমী অব বাংলাদেশ। বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্স, পোস্টারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন সংগঠনটির সভাপতি ও বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত।
শিকারী এসব জার্নালের হাত থেকে তরুণ গবেষকদের রক্ষা করতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও করা দরকার বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।
তরুণদের বাইরেও অনেকে খ্যাতি বা পদোন্নতির লোভী এসব ভূঁইফোড় শিকারী জার্নালে নিজেরা তাদের মানহীন গবেষণা ছাপছেন, তেমনি এদেরকে নতুন নতুন শিকার ধরতে সাহায্য করছেন। আগে কিংবা পরে তারা ঠিকই সনাক্ত হবেন বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ইউজিন হিজিন্স অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক যুগে কারো পক্ষেই এখন কোন কিছু গোপন করার সুযোগ নেই। তাই শিকারী জার্নালগুলোর শিকারে পরিণত না হতে চাইতে সচেতন হতে হবে এখনই।