[কোকাকোলা, পেপসি ও নেসলে প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ১৯৫০-এর দশক থেকে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার বিশ্বজুড়েই নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিকসইউরোপ সংগঠনটির হিসেব মতে, ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে ৩৬৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। যে হারে তা বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে, ২০৩০-৩৫ সাল নাগাদ প্লাস্টিকের উৎপাদন দ্বিগুণ ও ২০৫০ সাল নাগাদ তিন গুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে]
পেপসি ও নেসলে পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য পরিণত করার প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে
“আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে প্লাস্টিক ব্যবহার হয়, এসব তৈরিতে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার আছে। আর এর সব কিছুই বাতাসে নিঃসৃত হচ্ছে। আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এসব বুকে টেনে নিচ্ছি।”
– শ্যারন লেভিন, রাইজ সেইন্ট জেমস ক্যাম্পেইনের প্রতিষ্ঠাতা
১৯৫০-এর দশক থেকে, বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্লাস্টিকস ইউরোপের মতে, ২০২০ সালে সারা পৃথিবীতে ৩৬৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। যে হারে তা বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে, ২০৩০-৩৫ সাল নাগাদ প্লাস্টিকের উৎপাদন দ্বিগুণ ও ২০৫০ সাল নাগাদ তিন গুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্লাস্টিক তৈরির চক্রের প্রতিটি ধাপে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত হয়। তেল ও গ্যাস নিষ্কাশনের সময় মূলত মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে বায়ুমণ্ডলে। যা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে দশ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস। পাইপলাইনে করে তেল-গ্যাস কারখানায় নিয়ে যাওয়া এবং পাইপলাইন ও ট্যাংক লিক হওয়া থেকেও গ্যাস নিঃসরিত হতে পারে।
প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে প্রাকৃতিক গ্যাস বা অপরিশোধিত তেল থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ায় গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ঘটে থাকে। কখনও কখনও পরিবহনের সময়ও নিঃসরণ ঘটতে পারে।
কোনও প্লাস্টিক প্যাকেজিং বাতিল করা হলে সেটাও খোলা জায়গায় বা দহনচুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়াতেও বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকর বায়ুর দূষণকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় প্লাস্টিক প্যাকেজিং পুনর্ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রেও যেসব তথ্যউপাত্ত পাওয়া যায়, তা থেকে খুব বড় আকারের কার্বন ফুটপ্রিন্টের নিঃসরণের ইঙ্গিত মেলে।
২০১৯ সালে সে বছরের জন্য প্লাস্টিকের পুরো চক্র জুড়ে বৈশ্বিক নিঃসরণের যে-হিসাব পাওয়া গেছে, তা ২০০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎসারিত নিঃসরণের সমান।
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্লাস্টিকের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে, এমন অনেক গবেষণাই রেজিন উৎপাদন আর প্লাস্টিকের পণ্য তৈরির সময় ঘটা নিঃসরণের ওপরই আলোকপাত করেছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্লাস্টিকের প্রভাব আরো অনেক বেশি বিস্তৃত।
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ল (সিআইইএল) হিসাব করে দেখেছে, তেল নিষ্কাশন, পরিবহন, ও প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য পরিশোধনের সময় দুনিয়াব্যাপী ১০৮ মিলিয়ন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হয়। এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন ও পরিবহন ফি বছর আরও ৯.৫ থেকে ১০.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত করে। তেল-গ্যাসের ফ্র্যাকিং বুম বিশেষভাবেই ভাবনায় ফেলার মত। এগুলো বড় আকারে মিথেন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
গ্রিনপিসের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের জলবায়ু বিষয়ক প্রতিবেদনে ৯টি দ্রুত চলমান ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি – ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস) কোম্পানির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলো হল: কোকাকোলা, পেপসিকো, নেসলে, মন্ডেলেজ, ড্যানোন, ইউনিলিভার, কোলগেট-পালমোলিভ, প্রক্টের অ্যান্ড গ্যাম্বল, এবং মার্স। এদের মধ্যে ২০১৯ সালে যে-তিনটি কোম্পানি প্লাস্টিক প্যাকেজিং ও কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণে শীর্ষস্থানীয় ছিল, তাদের নিঃসরণের হিসাবটা একটু দেখা যাক।
১. কোকাকোলা: প্রায় ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, যার ফলে প্রায় দেড় কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে।
২. পেপসিকো: ২৩ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, যার ফলে ১ কোটি ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে।
৩. নেসলে: ১৫ লক্ষ ২৪ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, যার ফলে ৭৬ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হয়েছে।
উল্লিখিত কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ চেইনের জন্য হওয়া গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হিসাব দিচ্ছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের জন্য নিঃসরিত গ্রিনহাউজ গ্যাসের হিসাবও দিচ্ছে তারা। কিন্তু একটি কোম্পানিও ব্যবহারকৃত প্রতি মেট্রিক টন প্লাস্টিক ঠিক কী পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করে, প্রকাশ্যে তার হিসাব দেয় না। ফলে এরা যে খণ্ডিত হিসাব দেয় তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেহেতু তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় হওয়া নিঃসরণ এইসব কোম্পানির গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হিসাবে আমলে নেওয়া হয় না, তাই এসব কোম্পানি যতটা প্রকাশ করে, বাস্তবে নিঃসরণ তার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েই যায়।
তথ্যসূত্র :
Greenpeace. The Climate Emergency Unpacked: How Consumer Goods Companies are Fueling Big Oil’s Plastic Expansion. September 2021. pp. 2-8.