শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০ Friday 29th March 2024

শুক্রবার ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

Friday 29th March 2024

প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

৬ দিনে ৯ মামলা: পুলিশি নির্যাতনের বিচার চান সাংবাদিক ইফতেখার

২০২১-০৬-২৩

দৃকনিউজ প্রতিবেদন

৬ দিনে ৯ মামলা: পুলিশি নির্যাতনের বিচার চান সাংবাদিক ইফতেখার

 

রাজধানী ঢাকার তোপখানার ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ ২২ জুন ২০২১ এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সাংবাদিক ইফতেখার আহমেদ বাবু। তিনি ২৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা এসেছেন বিচারের দাবিতে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের ওপর চলা পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তিনি, সেইসঙ্গে দাবি করেছেন এই হামলা-মামলার অবসান।

 

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক বাবু জানান, তিনি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় বসবাস করেন এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ডেল্টা টাইমস পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি। এলাকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক তৎপরতায় যুক্ত থাকা ইফতেখার ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) আজিমউদ্দিনের চাঁদাবাজির তথ্য ফাঁস করায় তিনি থানা-পুলিশের চক্ষুশূল হন।

 

 

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ গভীর রাতে ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তার বাড়ি ঘেরাও করে। ইফতেখার বাবু তখন ঘটনাটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করেন। বাবুর দাবি, পুলিশ ঘরে ঢোকার পর তাকে ও তার স্ত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানী করে নগদ টাকা, স্বর্ণ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, প্রাইভেটকার ও মোবাইলসহ থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে গাড়ি ও মোবাইল ছাড়া আর কিছুর তথ্য জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি পুলিশ।


তিনি জানান, থানায় নিয়ে গিয়ে তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ সময় ওসি তাকে মোবাইলে থাকা সমস্ত তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন। সবকিছু মুছে ফেলতে সম্মত হওয়ার পরই নির্যাতন বন্ধ হয়।

 

 

গ্রেফতারের ছয়দিনের মধ্যে ইফতেখার জানতে পারেন যে, তার নামে ৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইফতেখার দাবি করেন, এসব মামলা সাজানো। ওসির কর্মকাণ্ডের সঙ্গী স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে এসব মামলার বাদী হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় সাক্ষী প্রায় একই। উপরন্তু, মামলাকারীরা অনেকেই এর আগে ইফতেখার সাক্ষী ছিলেন এমন এক মামলার আসামি। সাংবাদিক ইফতেখারের দাবি, ওসি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে এসব মামলার এজাহার পূরণ করে নিয়েছেন। মামলার বাদীরাও পূর্ব শত্রুতার জেরেই এসব মিথ্যা মামলা দিতে রাজি হয়েছে।

 

মামলার কাগজপত্রে দেখা যায় ইফতেখারের নামে যারা মামলা করেছেন, তারা আগে থেকেই তিনি সাক্ষী এমন মামলার আসামী ছিলেন, ইনসেটে ইফতেখারের আইডি কার্ড

 

৯টি মামলা থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসতে সাংবাদিক ইফতেখারের মোট তিন মাসের বেশি সময় এবং প্রায় দুই লাখ টাকা লেগে যায়। এর মধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এই মামলাটিতে জামিন নিতে উচ্চ আদালতে যেতে হয়। আর্থিক চাপ, পুলিশি হুমকি ও জেলখানায় বন্দিত্ব- সব মিলিয়ে তিনি ও তার পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে জানান ইফতেখার।

 

ইফতেখারের অভিযোগ, পুলিশ এখানেই থামেনি। ৫ এপ্রিল ২০২১ জামিনে জেলে থেকে বেরিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। জামিনে থাকা অবস্থায় একদিন জুমার নামাজ পড়ে বের হতে না হতেই মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে পুনরায় গ্রেফতার হন ইফতেখার। পুলিশ সে সময় তাকে জানায় যে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দিনাজপুর থানায় তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে।
 

এ দফায় ডেল্টা টাইমস পত্রিকায় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদন ছাপার দায়ে তার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ইফতেখার দাবি করেন, সে সময় কোভিড-১৯ জনিত লকডাউন এবং পুলিশি নির্যাতনের কারণে লেখালেখি ও অন্যান্য কাজকর্ম থেকে খানিকটা দূরেই ছিলেন তিনি। যদিও ওই প্রতিবেদনে দাবিকৃত তথ্য সঠিক এবং ইফতেখার নিজে ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে জানান তিনি। তবুও নির্যাতনের উদ্দেশ্যেই তার বিরুদ্ধে ওই প্রতিবেদনে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
 

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ইফতেখার বলেন, বর্তমানে আমি দৈনিক ডেল্টা টাইমস পত্রিকার ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রতিনিধি ও ঘোড়াঘাট প্রেস ক্লাব (ওসমানপুর) কমিটির ক্রীড়া, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা জাতীয় অনলাইন প্রেস ক্লাব-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমি যদি কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হই, তবে আমার শাস্তি হোক। কিন্তু একটাই প্রশ্ন, যে আমার বিরুদ্ধে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১-এর আগে কোনো মামলা ছিল না, কিভাবে মাত্র ছয়দিনের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়ে গেল?
 

ইফতেখার দাবি করে বলেন, ‘ঘোড়াঘাট থানা ওসি আজিমউদ্দিনসহ তার দলবল কর্তৃক নির্যাতনের সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমার ওপরে করা পুলিশি নির্যাতনের অবসান চাই। কোনো সমর্থন বা সুবিধা নয়, আমি কেবল ন্যায্য বিচার চাইছি।’

 

এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অভিযোগ অস্বীকার করে ঘোড়াঘাট থানার ওসি দৃকনিউজকে জানান, ইফতেখারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের পুরাতন মামলা রয়েছে। তাকে থানায় নির্যাতন করা হলে তিনি কেনো পরদিন আদালতে তা জানাননি। এছাড়া তার কাছ থেকে জব্দ কোনো কিছুই পুলিশ রাখেনি, সবই আদালতে জমা দিয়ে দিয়েছে।


তবে মামলার বিষয়ে সাংবাদিক ইফতেখার জানান, গ্রেফতারের সময় পুলিশের কাছে তার নামে কোনো ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানা ছিল না। জেলে গ্রেফতার থাকাকালে পুরাতন বিভিন্ন মামলার আসামির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Your Comment