বাসযোগ্য নগরের অন্যতম প্রধান শর্ত শহরে প্রয়োজনীয় সবুজের উপস্থিতি। পৃথিবীর বহু নগরে এমনকি ব্যাক্তি মালিকও নগর কর্তপক্ষের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটতে পারেন না।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে গাছ না কেটে সড়ক সংস্কার করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ হাঁটছে উলটো পথে। গাছ না কেটে কিংবা সম্পূর্ণ গাছ স্থানান্তর করার সুযোগ থাকলেও সেটি করছে না সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রাতের আধারে জিগাতলা থেকে শংকর পর্যন্ত সড়ক বিভাজনের মাঝের অসংখ্য ছোট-বড় ও মাঝারি আকারের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এমনকি সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে কর্মকর্তারা ঠিকমত জানেন না এই সিদ্ধান্তটি কার কাছ থেকে এসেছে। এমনকি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে এতো বড় একটা কর্মযজ্ঞ চললেও আশ্চর্যজনকভাবে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।
জানতে চাইলে সকল কর্মকর্তাই একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেকে দায় মুক্ত করছেন।
গাছ কাটতে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে দৃকনিজের পক্ষ থেকে কথা বলতে গেলে সাংবাদিক দেখে তারা সরে পড়েন। পরে এক শ্রমিকের কাছ থেকে ঠিকাদারের মুঠোফোন নাম্বার নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করলে তার সম্পৃকততার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
সাধারণভাবে যেকোন স্থানের বনজ গাছ কাটতে এবং স্থানান্তর করতে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে গাছ কাটার প্রক্রিয়া নির্ধারিত হয়।
সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
আঞ্চলিক কর্মকর্তা সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক মোঃ খায়রুল বাকেরের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরিকল্পনাহীনভাবে এরকম দেদারসের গাছ কাটার সংস্কৃতি সিটি কর্পোরেশনের বেশ পুরোনো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এই ধরনের প্রকল্প করা হয়।
এসব গাছ পালার সাথে বেড়ে ওঠা অন্যান্যের প্রাণের তোয়াক্কা করছে না দায়িত্ব প্রাপ্তরা। ফলে প্রাণ প্রকৃতিরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ।
গাছ কাটার আগে আরবরি কালচার বা বৈজ্ঞানিক প্রথায় বৃক্ষগুল্মাদি বিষয়ক একটি কমিটি করার প্রথা রয়েছে। তবে এরকম কোন কমিটির ব্যাপারেও কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
সার্বিকভাবে কোন প্রকল্পের অধীনে এইভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, কীভাবে তা স্থানান্তর করা হবে, গাছের কাঠগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হবে এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট তথ্য সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ধরনের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে বলেই মনে করেন সংস্লিষ্টরা। এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।