বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ Thursday 21st November 2024

বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

Thursday 21st November 2024

বহুস্বর মতামত

আমাদের মাঝে হেঁটেছেন যে মহামানব

২০২৩-০৪-১৫

শহিদুল আলম

ক্যাপশন: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোভিডের চিকিৎসা নেওয়ার সময়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে দেখতে গিয়েছিলেন রেহনুমা আহমেদ এবং শহিদুল আলম। জাফরুল্লাহ বলছিলেন, তাঁদের বিদায়ী ছবিটা তোলা উচিত মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুঁড়ে। শহিদুল গ্রেফতার হওয়ার পরে প্রতিবাদে তিনি বাতাসে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুঁড়েছিলেন, তারপর থেকে এই ছবিটি জনমানসে গেঁথে যায়।

 

 

যে সময়ে দম্ভসর্বস্ব নেতারা বাতাসে ঘৃণার তরঙ্গ ছড়িয়ে চলেছেন, যেখানে অন্ধভাবে প্রথার অনুসরণ করে যাওয়াটাই রীতি, যেখানে অর্থ আর পেশিশক্তি ছড়ি ঘোরায় প্রজ্ঞা আর উদারতার ওপর, যেখানে ‘আমরা’র পথ আটকে দাঁড়ায় ‘আমি’, সেখানে আমাদের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন এক ব্যতিক্রমী মানুষ। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্য ‘আমরা’টাই ছিলো সব, ‘আমি’ পড়ে থাকতো বহু পেছনে।

 

লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস এর বহু আকাঙ্ক্ষিত ফেলোশিপ হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য লেখাপড়াকে বিদায় জানিয়েছিলেন তিনি। সে সময়ে তিনি মাঠ পর্যায়ের একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন, যার ফলে রক্ষা পেয়েছিলো বহু জীবন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাফরুল্লাহ এবং অন্যান্যরা মিলে ১৯৭১ সালেই গড়ে তোলেন দাতব্য ট্রাস্ট গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি, অলাভজনক এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা। নামটা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া। জাফরুল্লাহ তাঁর অত্যন্ত স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। জাফরুল্লাহর অনেক অবদানের মধ্যে আছে বাংলাদেশে ওষুধ নীতির প্রবর্তন করা, যার ফলে বাংলাদেশে সস্তা দামের সাধারণ নানা ঔষধ উৎপাদন শুরু হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওষুধ নীতির ফলে দেশে যত লোকের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে, তা সম্ভবত অন্য যে কোন একটি একক কাজের তুলনায় বেশি।  

 

জাফরুল্লাহ ছিলেন সেই পঞ্চাশজন নাগরিকের একজন, যাঁরা আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আদালত এতে অসন্তুষ্ট হন এবং ‘ব্যাখ্যা’ দাবি করেন। এরপর সেই পঞ্চাশজন নাগরিকের সিংহভাগই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অল্প কয়েকজনের তাঁদের অবস্থানে অটল ছিলেন, যার মধ্যে জাফরুল্লাহ আর আমি ছিলাম। আদালত শাস্তি দেওয়ার জন্য জাফরুল্লাহকে বেছে নেয়।

 

নিজের মতে অটল, মাঝেমধ্যে একগুঁয়ে, কখনও কখনও বদমেজাজী এই মানুষটি ছিলেন সদা আনন্দময়। কখনোই কারো সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করতেন না তিনি, এমনকি কারও সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্নমত থাকলেও না। এসব মানুষের মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রীও, যাঁর সঙ্গে তিনি শেষ অবধি সংলাপ চালিয়ে গেছেন। এর লক্ষ্য ছিল পরস্পরের সঙ্গে কলহে লিপ্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে থাকা চাটুকারেরা জাফরুল্লাহর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেরি করেনি। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন। যাদের কাছে দেশকে রক্ষা করাটা কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না, তাদের হাত দিয়েই দেশ রক্ষার শেষ সুযোগটা নিষ্ঠুরভাবে ধূলিসাৎ হলো। তিনি এরপর থেকে আর কারও সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

 

সস্তা জনপ্রিয়তার ইঁদুর দৌড়ে নামার মানুষ ছিলেন না জাফরুল্লাহ। বরং, তিনি মাঝেমাঝে বিতর্কিত অবস্থান নিতেন। তিনি ছিলেন সেই পঞ্চাশজন নাগরিকের একজন, যাঁরা সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে দেওয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের  শাস্তি সম্বন্ধে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিচার প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগত বিভিন্ন দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ডেভিড বার্গম্যান। বিষয়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ছিলো, যেখানে জনসমর্থন সঙ্গত কারণেই ছিলো যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। ডেভিডের বক্তব্য ছিলো, এমনকি যুদ্ধাপরাধীদেরও সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় তাঁকে। জাফরুল্লাহ ছিলেন সেই পঞ্চাশজন নাগরিকের একজন, যাঁরা আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আদালত এতে অসন্তুষ্ট হন এবং ‘ব্যাখ্যা’ দাবি করেন। এরপর সেই পঞ্চাশজন নাগরিকের সিংহভাগই পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অল্প কয়েকজনের তাঁদের অবস্থানে অটল ছিলেন, যার মধ্যে জাফরুল্লাহ আর আমি ছিলাম। আদালত শাস্তি দেওয়ার জন্য জাফরুল্লাহকে বেছে নেয়।

 

নারী অধিকারের কট্টর সমর্থক জাফরুল্লাহ নারী গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ দেন তিনি, এবং তাদের সমান পারিশ্রমিক নিশ্চিত করেন। দাতা এবং প্রধান বেসরকারি সংস্থাগুলোতে যে নারী চালকেরা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগেরই শুরুটা হয়েছিলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অত্যন্ত শ্রেণিসচেতন এই সমাজে গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্র্যাকসহ অন্যান্য বিখ্যাত বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের মতো জাফরুল্লাহ কখনও তাঁর সহকর্মীদের কাছে ‘স্যার’ ছিলেন না, তিনি ছিলেন ‘বড় ভাই’

 

পরিণামের ভয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা কখনও পিছিয়ে যাননি। এমনকি শুরুর দিকেও জাফরুল্লাহ ছিলেন সেই অল্প কয়েকজনের একজন যারা মুজিবের একদলীয় ব্যবস্থা বাকশালে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ব্যক্তিগত আলাপে তিনি জানিয়েছিলেন বিদ্রোহী সিরাজ শিকদারকে আশ্রয় দেওয়ার আর শিকদারের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার কথা। সরকারের হঠকারিতার খোলাখুলি সমালোচনা করতেন তিনি, নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে কখনও দ্বিধা করতেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজে যদিও সংযত ছিলেন, তাঁর অনুগত দল তাঁর মতো সংযমী ছিলো না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করা হলো, আর অবিশ্বাস্যভাবে জাফরুল্লাহকে বলা হলো ‘মাছ চোর’!

 

নারী অধিকারের কট্টর সমর্থক জাফরুল্লাহ নারী গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদেরকে নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ দেন তিনি, এবং তাদের সমান পারিশ্রমিক নিশ্চিত করেন। দাতা এবং প্রধান বেসরকারি সংস্থাগুলোতে যে নারী চালকেরা কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগেরই শুরুটা হয়েছিলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। অত্যন্ত শ্রেণিসচেতন এই সমাজে গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্র্যাকসহ অন্যান্য বিখ্যাত বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের মতো জাফরুল্লাহ কখনও তাঁর সহকর্মীদের কাছে ‘স্যার’ ছিলেন না, তিনি ছিলেন ‘বড় ভাই’।

 

আলোকচিত্রী হিসেবে আমার আগ্রহ চরমে উঠলো তখন, যখন আমি জানলাম দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য চিকিৎসক প্রতিটি সাপ্তাহিক ছুটি কাটান গ্রামীণ চিকিৎসকের ভূমিকায়। দূর-দূরান্তের চরে সেইসব মানুষের কাছে যেতেন তিনি, যাদের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আর কোনো উপায় ছিলো না। আমরা একসাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু দুজনের সময় কখনও মেলেনি। এরপর আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলো, আমি কারারুদ্ধ হলাম। তারপর আসলো কোভিড। জাফরুল্লাহর সময়টাও খারাপ যাচ্ছিলো। তাঁর কিডনি অকেজো হয়ে পড়ছিলো বলে ডায়ালাইসিস শুরু হলো। ঘনঘন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে লাগলো, শেষমেশ সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস নিতে থাকলেন তিনি।

 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে একটা ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড চালু করলেন তিনি, যার সেবার খরচ অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অনেক কম। এর পেছনের চিন্তাটা ছিলো এমন যে, সচ্ছল রোগীদের কাছ থেকে দরিদ্র রোগীদের খরচের একটা অংশ আসবে; আর দুই শ্রেণির রোগীই মানসম্মত সেবা পাবেন। এই চিন্তাটা কখনোই কাজ করেনি। শ্রেণিসচেতন বাংলাদেশে অবস্থাপন্ন রোগীরা দরিদ্র রোগীদের সাথে একই জায়গায় চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।

 

চরে যাওয়াটা আর সম্ভব ছিলো না। এই অসুস্থতা অবশ্য তাঁর বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশে, টক শোতে বা সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া আটকাতে পারেনি। প্রায়ই তিনি সরাসরি হাসপাতালের বিছানা থেকে এসব জায়গাতে যেতেন। তাঁর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে তিনি মঞ্চে থাকা অবস্থায় চিকিৎসক তাঁকে ইঞ্জেকশন দিচ্ছিলেন। যখন আর হাঁটতে পারতেন না, তখনও তিনি হুইলচেয়ারে বসে বিভিন্ন মিছিলের নেতৃত্ব দিতেন। রোগী হিসেবে তিনি দেখেছিলেন, ডায়ালাইসিসের খরচ যোগাতে অসমর্থ অতি দরিদ্র রোগীরা কীভাবে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ খরচ যোগাচ্ছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে একটা ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড চালু করলেন তিনি, যার সেবার খরচ অন্য যেকোনো জায়গা থেকে অনেক কম। এর পেছনের চিন্তাটা ছিলো এমন যে, সচ্ছল রোগীদের কাছ থেকে দরিদ্র রোগীদের খরচের একটা অংশ আসবে; আর দুই শ্রেণির রোগীই মানসম্মত সেবা পাবেন। এই চিন্তাটা কখনোই কাজ করেনি। শ্রেণিসচেতন বাংলাদেশে অবস্থাপন্ন রোগীরা দরিদ্র রোগীদের সাথে একই জায়গায় চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। যে দেশের অবস্থাপন্ন লোকেরা সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যে পর্যন্ত বাইরে যান, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা কখনও কখনও বিশাল বহর নিয়ে জনগণের টাকায় বিদেশ ঘোরেন যান, জাফরুল্লাহ সেখানে বাড়িতে চিকিৎসা নিতে চাইতেন এবং অবিচলিতভাবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নাকচ করে দিতেন।

 

জাফরুল্লাহর গল্পটা বলতেও আমি আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু যে তিনি পাবলিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে কখনও পিছপা হননি, সেই তিনিই নিজের সম্বন্ধে বলতে চাইতেন না। তাঁকে সাক্ষাৎকারের জন্য রাজি করানোর কাজটা কখনোই সহজ ছিলো না। একবারই তিনি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গিয়েছিলেন, সেটা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র টিম কোভিড-১৯ নির্ণয়ের একটা সরল পরীক্ষা উদ্ভাবনের পর। সেটা ছিলো অতিমারীর শুরুর সময়ে, যখন কম খরচে দ্রুত ফলদায়ী একটা পরীক্ষা কিটই সবচেয়ে দরকারি জিনিস ছিলো। বহু জীবন বাঁচাতে পারতো সেটা। সরকার এই কিটকে অনুমোদন দেয়নি। মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সংক্রান্ত উদ্বেগটা যথাযথ ছিলো, জাফরুল্লাহ তৎক্ষণাৎ তা মেনেও নিয়েছিলেন।

 

কিন্তু এ বিষয়টা পরিষ্কার ছিলো যে, আসল সমস্যাটা ছিলো জাফরুল্লাহর সমাধানের অতি সস্তা দাম। সমস্যাটা ছিলো এই যে, টাকা বানানোর নানা উপায়ের প্রলোভনে জড়াতে তিনি নারাজ ছিলেন। যেমনটা ভাবা গিয়েছিলো, কিটটির এই স্বল্প খরচ, দ্রুত ও কার্যকর ফলাফল কখনও আলোর মুখ দেখেনি। এর পরিবর্তে চীন থেকে আসা সম্পূর্ণ অপরীক্ষিত কিট এবং অন্য নানা উৎস থেকে আসা অনেক বেশি দামের কিট সরকারের প্রীতিভাজন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং হাসপাতালগুলোর হাত ধরে এ দেশে এসে ব্যাপক মুনাফা করতে লাগলো। মাননিয়ন্ত্রণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও, আর প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় মানের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরীক্ষা কিট অননুমোদিতই রয়ে গেলো। সরকারের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন করা সাংবাদিকেরা কারাগারে গেলেন। সাক্ষাৎকারে জাফরুল্লাহ স্পষ্ট আর সরাসরি কথা বললেন। আমি সঙ্গেসঙ্গেই সাক্ষাৎকারটা পোস্ট করেছিলাম। তাতে কিছুই আসে যায়নি। সত্যের জয় হবেই-- আমাদের এই বিশ্বাস, আর মূলধারার গণমাধ্যম একটা ন্যায্য আন্দোলনের দিকে মনোযোগ দেবে— আমাদের এই আশা-- দুটিই ভুল প্রমাণিত হয়েছিলো। মুনাফার একদমই নিজস্ব ব্যাকরণ আছে।

 

শিকাগোর উদ্দেশ্যে বিমান ধরতে যাওয়ার আগে আমি তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার ছেলেবেলার পরিচিতা তাঁর সহধর্মিণী শিরীন হক, তাঁদের ছেলে বারিশ আর মেয়ে বর্ষা সবাইই সেখানে ছিলেন। আমি বলার কিছু পাচ্ছিলাম না। যা ঘটতে চলেছিলো, তার ভারটার কথা আমরা সবাইই জানতাম। সে সময়টায়, যখন জাতির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সততা আর অঙ্গীকার। যখন সত্য উচ্চারণ একটা বিরল গুণ। যখন জনতার সেবা করাটা খুব জরুরি, যখন নেতৃত্বের অভাবটা বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে, তখন আমরা আমাদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক মহামানবকে হারাতে চলেছিলাম। ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বিমানে উঠেছিলাম আমি। গন্তব্যে যখন পৌঁছালাম, ততোক্ষণে সেই মহামানবও যাত্রা শুরু করেছেন। আমার বিনম্র যোদ্ধা, বিশ্রামেও থাকুন শক্তিমান।

 

 

 

লেখা: ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী, মানবাধিকার কর্মী, এবং দৃক পিকচার লাইব্রেরি, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট ও মেজরিটি ওয়ার্ল্ড এর প্রতিষ্ঠাতা।

ইংরেজি থেকে ভাষান্তর: দীপান্বিতা কিংশুক ঋতি

Your Comment