হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের তীর ক্ষমতাসীনদের দিকে, তবে সুনির্দিষ্ট করে কারো প্রতি অভিযোগ দিতে পারেননি এই ভুক্তভোগী পরিবার। বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে গত ৭ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ওয়ারীতে নিজ বাড়িতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় নিহত হন একজন সাধারণ বাবা, মো. মিল্লাত হোসেন। বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন ওয়ারী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল মেহবুব মিজু’র বাবা ছিলেন তিনি।
রাত ১২টা বেজে গেছে, বাড়ির অনেক সদস্যই তখন ঘুমিয়ে পড়েছেন। এসময় যুবদল নেতা মিজুর খোঁজে বাড়িতে হামলা চালায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত। যুবদলের সেই নেতা বাড়িতে ছিলেন না। তাই বিএনপি’র সাবেক নেতা তার চাচা শাহাদাত হোসেন স্বপনকে ধরে নিয়ে যান। পরে যার সন্ধান মেলে কারাগারে। ভাই স্বপনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিলে হামলার শিকার হয়ে মারা যান বড় ভাই মিল্লাত হোসেন। বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সাবেক নেতা ছিলেন তিনি।
এই যৌথ পরিবারের সবচেয়ে বায়োজ্যেষ্ঠ, ৮৫ বছর বয়সী ফজিলাতুন্নেসা। ৬৫ বছরের সন্তানকে নির্মমভাবে হারানোর ঘটনার সাক্ষী তিনি। মিল্লাত হোসেনের মা জানান, বাড়ির সবাইকে নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। তবে জননিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ মনে করেন না, তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে।
এই পরিবারের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। তবে কার নেতৃত্বে কোন নেতা-কর্মীরা গভীর রাতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন এই বিষয়ে নিশ্চিত নন তারা।
পুলিশের দাবি, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন মিল্লাত হোসেন। অন্যদিকে ডেথ সার্টিফিকেটে মাথার নিচে ও কাঁধের ওপরে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, এ ধরনের আঘাতে মৃত্যু হতে পারে। এদিকে প্রায় ৩ মাস হয়ে গেলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ঘিরে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নিহত মিল্লাত হোসেন। এলাকাবাসী জানান, যে কোনো সংকটেই এগিয়ে আসতেন তিনি। এই পরিবারের বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ নেই। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে সক্রিয় এলাকার কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরব দাবি করেন, কারা এমন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। মিল্লাত হোসেনকে ভালো মানুষ বললেও এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নিতে অপারগ তিনি।
মিল্লাত হোসেন খুন হওয়ার ঘটনায় এই পরিবার এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে মামলা করেননি। বিএনপি’র পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার কথা থাকলেও এপর্যন্ত হয়নি। এদিকে এই বিষয়ে কথা বলা নিষেধ আছে বলে জানান ওয়ারী থানা পুলিশ।
এই ঘটনার বেশ কয়েকদিনের মধ্যে ওয়ারী থানা থেকে ওসি কবির হোসেন হাওলাদারকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়েছে। অর্থাৎ এই মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক এবং নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্ট। বিএনপি’র রাজনীতিতে যুক্ত থাকার কারণে অনেকেই কারাগারে আছেন, নিখোঁজ এবং নিরাপত্তাহীনতায় পলাতক রয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা যেকোনো রাজনৈতিক দল করার দায়ে এমন নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি চান না দেশবাসী।