বাংলাদেশি সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সিপিজে'র প্রতিবাদ
২০২৩-০১-২৮
২৫ জানুয়ারি রাতে প্রচারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রঘুনাথ খাঁ নামের একজন সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। পাশাপাশি, তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করারও দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
রঘুনাথ খাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়া রানি খাঁর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এবং একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে সিপিজে জানতে পেরেছে যে, জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ, সোমবার সকাল ১১টার দিকে সাদা পোশাক পরিহিত পুলিশ অফিসার রঘুনাথ খাঁকে তুলে নিয়ে গেছে। রঘুনাথ খাঁ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি এবং বেসরকারি মালিকানাধীন পত্রিকা দৈনিক প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিনিধি।
স্থানীয় ভূমিহীন মানুষদের সাথে যোগসাজশে ওই এলাকায় একটি কথিত বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর প্রচেষ্টার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে পুলিশ রঘুনাথ এবং আরো দুই জনকে গ্রেফতার করেছে। একই সূত্র থেকে আরো জানা যায় যে, পুলিশ প্রাথমিকভাবে রঘুনাথ খাঁকে গ্রেফতার করার কথা অস্বীকার করেছিলো।
পরদিন যখন সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আদালতে তোলা হয়, তখন তিনি ঠিকমত দাঁড়াতে পারছিলেন না। তাঁর স্ত্রী সিপিজেকে জানিয়েছেন যে, আদালতে রঘুনাথ খাঁ তাঁকে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে মারাত্মকভাবে পিটিয়েছে, বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে এবং ভূমিহীন মানুষদের নিয়ে রিপোর্ট করা অব্যাহত রাখলে তাঁকে খুন করে ফেলার হুমকি দিয়েছে।
শুনানি শেষে আদালত তদন্ত চলাকালীন অবস্থায় তাঁকে সাতক্ষীরা জেলে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিয়া রানি খাঁ জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে প্রথম এজাহারের কপি দেয়নি, যা দেখলে বোঝা যেত নির্দিষ্ট কোন কোন অভিযোগ তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
সিপিজের এশিয়া অঞ্চলের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর লি উই বলেছেন, “বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ” কর্তৃক সাংবাদিক রঘুনাথ খায়ের গ্রেফতার এবং তাঁর সাথে করা নিপীড়নমূলক আচরণের ঘটনা দেশটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর সর্বশেষ আক্রমণ। বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন এবং অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে।
সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁয়ের স্ত্রী জানিয়েছেন, পুলিশ রঘুনাথকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার আগে আদালতে তোলেনি, যা বাংলাদেশের কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের স্পষ্ট ব্যত্যয়। এই কোড বলছে, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে পুলিশ বাধ্য।
সুপ্রিয়া রানি খাঁ সিপিজেকে জানিয়েছেন, তাঁর বিশ্বাস পুলিশের সমর্থনপুষ্ট ভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ভূমিহীনদের সংগ্রাম নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় কর্তৃপক্ষ তাঁর স্বামীকে টার্গেট করেছে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে সাতক্ষীরা পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাজী মনিরুজ্জামান ক্রমাগত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে তাঁর প্রতিবেদনের জন্য গ্রেফতার করার এবং আইনের মারপ্যাচে ফেলে শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা পুলিশ খুলনা ডিভিশন পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ এইসব হুমকির ব্যাপারে খুলনা বিভাগের ডিআইজি মঈনুল হক বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। সুপ্রিয়া রানি সিপিজেকে জানিয়েছেন, মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিপিজে মনিরুজ্জামান এবং মঈনুল হকের কাছে ই-মেইল এবং মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে এই ঘটনার ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনো উত্তর মিলেনি।
বাংলাদেশে আটককৃত সাংবাদিকদের উপর পুলিশি নির্যাতনের একই রকম অভিযোগ সিপিজে আগেও ডকুমেন্টেড করেছে। সিপিজের ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড ২০২০ বিজয়ী সাংবাদিক শহিদুল আলম সিপিজেকে জানিয়েছেন, তাঁকেও পুলিশ হেফাজতে মারধর করা হয়েছিলো। কার্টুনিস্ট কবির কিশোর সিপিজেকে জানিয়েছেন, তাঁকেও মারধর করা হয়েছিলো। এই কার্টুনিস্ট জানিয়েছেন, তাঁর সহকর্মী মুশতাক আহমেদকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিলো এবং তিনি কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
অনুবাদ: রাকিবুল হক রনি