ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো যেনো আলোকচিত্রের জাতিসংঘ! সারা পৃথিবী থেকে আসা সেরা আলোকচিত্রের মাঝ থেকে বাছাই হয়ে সেরাদের সেরা আলোকচিত্রগুলো স্থান পায় এই প্রদর্শনীতে। এসব আলোকচিত্রে করোনায় বিপর্যস্ত জীবন, আদিবাসী, বর্ণবাদ, নারীর সংগ্রাম, তালেবান আগ্রাসন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানবিধ গল্প এবং গল্পের পেছনের গল্প তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে বাছাইকৃত আলোকচিত্র নিয়ে হয় ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো এক্সিবিশন। এশিয়া অঞ্চলে যার প্রদর্শনী চলছে দৃক পিচকার লাইব্রেরিতে।
ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো আয়োজনে একসময়ে ছিল পশ্চিমা দুনিয়ার একাধিপত্য, বাকি পৃথিবীকে দেখা হতো পশ্চিমেরই চোখে। এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জুমানা এল জেইন খৌরি দৃকনিউজকে বলেন: সময়ের সাথে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের যে পরিবর্তনের দরকার ছিলো, তা হয়নি। বিশেষত আলোকচিত্রের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে।
আমি দায়িত্বে এসে দেখলাম পৃথিবীজুড়ে আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া আলোকচিত্রীদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসছেন ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা থেকে। শহিদুল হয়তো এভাবে বলবে যে, পৃথিবীর বৃহত্তর অংশ থেকে তাঁরা আসতেন না। আমার মনে হয়, এটা ‘ওয়ার্ল্ড’ প্রেস ফটো হতে পারে না। আমরা যেসব পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলাম তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় এবং ঐতিহাসিক কারণেই এটা বেশ কঠিন ছিলো।
সারা পৃথিবীর প্রতিনিধি হয়ে উঠতে তাই বড়সড় পরিবর্তন এসেছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রদর্শনীতে। ফাউন্ডেশনের ৬৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নতুন এক আঞ্চলিক মডেল তুলে ধরা হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতাটি এবার বিশ্বব্যাপী মোট ছয়টি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ছয় অঞ্চলের মধ্যে ২৩ দেশের ২৪ জন আলোকচিত্রীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাদের আলোকচিত্র প্রদর্শণ করা হয়েছে। এতে করে এতোদিন বিশ্বের সকল আলোকচিত্র পশ্চিমাদের চোখে মূল্যায়িত হলেও এবার তা হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক জুরিদের মূল্যায়নে।
গত ৪ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো এক্সিবিশনের উদ্বোধন করা হয়। প্রদর্শনীর উদ্বোধন উপলক্ষে আলোকচিত্রীদের সাথে আলোচনা, ভিজ্যুয়াল লিটারেসির গুরুত্বসহ দুই দিন ব্যাপী নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৃক কর্তৃপক্ষ।
এসব আয়োজনে অংশ নেন দৃকের কর্ণধার আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জুমানা এল জেইন খৌরি, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অ্যানি ভ্যান লিউয়েন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার সাবেক জুরি আবির আব্দুল্লাহ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ আরও অনেকে।
এবার প্রতিযোগিতাটির ৬৫তম আসরে ১৩০টির বেশি দেশের ৪ হাজারের অধিক আলোকচিত্রী প্রায় ৬৫ হাজার আলোকচিত্র পাঠিয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে সাহসী, চ্যালেঞ্জিং এবং শক্তিশালী আলোকচিত্র সাংবাদিকতা ও ডকুমেন্টারি আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
দেশে যেখানে প্রতিনিয়ত আলোকচিত্রী ও সাংবাদিকসহ সর্বস্তরে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে সেখানে সেন্সরশীপবিহীন এরকম একটি আয়োজন আশার সঞ্চার করছে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে।
দৃকের উদ্যোগে বাংলাদেশে এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত হচ্ছে। দৃকের বাইরে অন্য কোথাও এই প্রদর্শনীর বহু ছবি দেখানো করা যেতো না বলেই দৃকের সীমিত পরিসরেই এই আয়োজনটি করতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে শহিদুল আলম বলেন:
রাজধানীর পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী; যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।