আলোকচিত্র : ডেভিড পোলটনি
প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, লেখক, মানবাধিকার কর্মী ড. শহিদুল আলমকে আলোকচিত্র ও আন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য সন্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডন। উল্লেখ্য যে, শহিদুল আলম লন্ডন ইউনিভার্সিটির বেডফোর্ড কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে জৈব রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডন তাদের নবীন স্নাতকদের সনদ প্রদান উপলক্ষে এবছর ১৫ জন বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা প্রদান করেছে। এই আয়োজনটি গত ৮ জুলাই লন্ডনের রয়েল ফেস্টিভ্যাল হলে অনুষ্ঠিত হয়। ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডনের পক্ষ থেকে আচার্য গ্রেসন পেরি এই সম্মাননা প্রদান করেন। শহিদুল আলম এর আগে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির শিল্পকলা পদক (২০১৪) সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পদক পেয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালে শহিদুল আলম যখন লুসি ফাউন্ডেশনের হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড পান, তখন তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সমর্থনের দায়ে দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন। প্রখ্যাত সাহিত্য তাত্ত্বিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক কারাবন্দি শহিদুল আলমের পক্ষে সেই পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন ।
দৃক পিকচার লাইব্রেরি, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট এবং মেজরিটি ওয়ার্ল্ড এর প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম সম্মাননা গ্রহণের বক্তৃতায় তরুণ স্নাতকদের উদ্দেশ্যে বলেন: “উপেক্ষার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের, এবং সত্যি বলতে কী, যে কোন লড়াইয়ের একমাত্র পথ হলো অসাধারণ সব কাজ দিয়ে ছাপিয়ে যেতে থাকা, যাতে অবজ্ঞা করাটা অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই এই কাজটাই একাগ্রভাবে করতে থাকুন, বিরতিহীনভাবে করতে থাকুন। এটাই আপনার সেরা অস্ত্র, এটাই আপনাকে কার্যকরতম সুরক্ষা দেবে”।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের সময়ে শহিদুল আলমের তিনটি প্রদর্শনী তিনটি পৃথক মহাদেশে চলছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “"We Shall Defy"”, জার্মানিতে "Talking To My Archive" এবং ভারতে "Singed But Not Burnt"। “Talking To My Archive” অচিরেই গ্রন্থাকারেও প্রকাশিত হবে, এর প্রকাশক প্রখ্যাত মুদ্রনসংস্থা স্টিডল।
উল্লেখ্য যে, আলোকচিত্র ও মানবাধিকার আন্দোলনের সুবিদিত মুখ শহিদুল আলম ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাকট (আইসিটি) আইনে দায়ের করা একটি মামলায় এখন জামিনে আছেন। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে রাস্তায় নামা শিশুদের আন্দোলনে সমর্থনের দায়ে শহিদুল আলমকে চোখ বেঁধে ও পেছনে হাত কড়া পরিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ৬ আগস্ট তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হয়। মানবাধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী ড. শহিদুলের মুক্তির দাবিতে দেশ-বিদেশে জারি থাকে প্রতিবাদ।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সমর্থনের কারণে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হন শহিদুল আলম। আলোকচিত্র: শুভ্র কান্তি দাশ
অবশেষে ১০৭ দিন কারাভোগের পর ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন তিনি। বহু নিন্দা ও সমালোচনার মুখে এই আইনটি রদ করা হলেও শহিদুল আলমকে এই আইসিটি আইনে হয়রানি করা অব্যাহত আছে। মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী হওয়ার কারণে এই আইনের যে অংশগুলোর বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছিল, সেগুলোকে পরবর্তীকালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টেও রেখে দেয়া হয়েছে।
দৃকনিউজের কাছে এই সম্মাননাসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন বিষয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শহিদুল আলম বলেন, "ইউনিভার্সিটি অব আর্টস লন্ডন শিল্পকলা ও ডিজাইন বিষয়ে পৃথিবীর প্রধান দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে একটি। এই মিডিয়া স্কুল প্রতি বছর একটি মাত্র সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। একজন বাংলাদেশী হিসেবে এই সম্মান পেয়ে আমি গৌরব বোধ করছি। অজস্র প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশ কী অর্জন করেছে, আরও কী অর্জন করতে পারে, এটা তারই একটা স্বীকৃতি।"