শুক্রবার ১৯শে আশ্বিন ১৪৩১ Friday 4th October 2024

শুক্রবার ১৯শে আশ্বিন ১৪৩১

Friday 4th October 2024

আন্তর্জাতিক মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েল: পশ্চিমা গণমাধ্যম যখন খুনীর নামটা এড়িয়ে যায়

২০২২-০৫-১৫

আহমেদ আলনাউক
তর্জমা: ইরফানুর রহমান রাফিন

ইসরায়েল: পশ্চিমা গণমাধ্যম যখন খুনীর নামটা এড়িয়ে যায়

ইসরায়েলি আততায়ীর গুলিতে নিহত সাংবাদিক শিরিন স্মরণে গাজা শহরের দেয়ালে দেয়ালে ফিলিস্তিনিদের আঁকা ম্যুরাল। ছবি: এএফপি 

 

ইসরায়েলের জুলুমবাজির বেলায় পশ্চিমা গণমাধ্যম কেন প্রকৃত জালিমের নাম উচ্চারণ করতে এত অনিচ্ছুক থাকে? কেন তাদের প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর জন্য কে বা কী দায়ী তা উল্লেখ না করেই শুধু বলা হয়, বর্ষীয়ান ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ ২০২২ সালের মে মাসের ১১ তারিখে “মারা গেছেন”?

 

 

(প্রায় নিশ্চিতভাবেই একজন ইসরায়েলি) আততায়ীর হাতে আবু আকলেহ- এর খুন হওয়ার জঘন্য ঘটনাটা সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। যার ফল হিসেবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারের একটা বিস্ময়কর ঢল দেখা দিয়েছে। গত ৪৮ ঘন্টা ধরে যে এ- বিষয়ক খবরগুলোকে উপচে পড়তে দেখা যাচ্ছে, তাতে আবু আকলেহর মার্কিন নাগরিক হওয়ার ব্যাপারটা হয়তো ভূমিকা রেখেছে, কিংবা হয়তো ভূমিকা রেখেছে একটা গণমাধ্যম চ্যানেল হিসেবে আল জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা ও ক্ষমতা।  কিন্তু যেটার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি, সেটা হলো হল খোদ ফিলিস্তিনিরাই আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিরামহীনভাবে লেখা পোস্ট করতে থেকে বা ছড়িয়ে দিয়ে মূলধারার গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, অন্য যে- কোনোকিছুর চেয়ে এই ব্যাপারটিই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোকে তাগিদ বা হয়তো লজ্জা দিয়েছে যার ফলে খবরটা তারা সম্প্রচার করেছে।

 

 

আমি নিজে একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। আমার মাস্টার্স ডিগ্রির প্রয়োজনীয় অভিসন্দর্ভের জন্য সাধারণভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত ও বিশেষভাবে মাসিরা আল-আওদা আল কুবরা [ঘরে ফেরার অভিযাত্রা বা ইংরেজিতে মার্চ ফর রিটার্ন; শরণার্থী হিসেবে নানান দেশে ছড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনীদের দেশের ফেরার অধিকারের দাবিতে ২০১৮-১৯ সালে অনুষ্ঠিত গাজা ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত প্রতি শুক্রবারের নিয়মিত আয়োজন] কর্মসূচির পশ্চিমা প্রচারকে অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি। ফিলিস্তিন নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম কেন এতটা পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, সেটা নিয়ে আমার মধ্যে সবসময়ই কৌতূহল ছিল, এ কারণেই আমার এই বিষয়টি পাঠ করতে চাওয়া। আমার গবেষণা আরম্ভ করার পর আমি এই বিষয়ে শত শত নিবন্ধ, বইপত্র, ও গবেষণার সন্ধান পেলাম। আমাকে স্বীকার করতেই হবে, যে আমার অভিসন্দর্ভ লেখাটা তাই সহজ ছিল। আর তথ্যসূত্রমূলক উপাদানেরও কোনো অভাব ছিল না।

 

 

আমার গবেষণার ফল ঘোষণা করার কোনো প্রয়োজন নেই। সবাই ইতোমধ্যেই জানেন।  প্রচারটা পুরোপুরি একতরফা। কিন্তু প্রশ্নটা অমীমাংসিত রয়ে গেছে: কেন? কেন সংবাদ মাধ্যম ইসরায়েল বিষয়কে প্রচারে এত খোলাখুলিভাবে একচোখা অবস্থান নেয়? ইসরায়েলের বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্থা, এর দখলদারিত্ব, এবং এর দ্বারা ফিলিস্তিনিদের অপমান ও বেইনসাফির শিকার হওয়া সত্ত্বেও এটা কেন ঘটে? এটা আমাকে সব সময়েই ধাঁধাঁর মত লাগতো।

 

২০১৯ সালের দিকে একদিন আমাদের শ্রেণিকক্ষে আমাদের অধ্যাপক বিবিসির অভিজ্ঞ একজন সাংবাদিককে দাওয়াত দিয়েছিলেন আমাদের সাথে আলাপ করার জন্য। তো তিনি তার উপস্থাপনা শেষ করা মাত্র, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “সংঘাতের খবর প্রচার করার সময় বিবিসি কেন ইসরায়েলের প্রতি এত পক্ষপাতিত্ব দেখায়?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমাদের প্রতিবেদকরা যা দেখেন… যা তারা সত্যি বলে ভাবেন, সেটাই প্রচার করেন।”

 

২০১৯ সালের দিকে একদিন আমাদের শ্রেণিকক্ষে আমাদের অধ্যাপক বিবিসির অভিজ্ঞ একজন সাংবাদিককে দাওয়াত দিয়েছিলেন আমাদের সাথে আলাপ করার জন্য। তো তিনি তার উপস্থাপনা শেষ করা মাত্র, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “সংঘাতের খবর প্রচার করার সময় বিবিসি কেন ইসরায়েলের প্রতি এত পক্ষপাতিত্ব দেখায়?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমাদের প্রতিবেদকরা যা দেখেন… যা তারা সত্যি বলে ভাবেন, সেটাই প্রচার করেন।” সেসময় আমি চুপ করে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তার দাবিতে কিছুটা সত্যতা থাকতেও পারে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে প্রতিবেদনের আদ্যোপান্ত পড়ার পর, আমি ঠিক তাই আবিষ্কার করলাম যা সাংবাদিকতার যে-কোনো প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীও দেখতে পাবে: পশ্চিমা সংবাদ সম্প্রচার আদতে উদ্দেশ্যমূলভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট এবং অতিশয় অপেশাদার।

 

শিরিন আবু আকলেহর “মারা” যাওয়া কোনো নিরীহ বিষয় না

 

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে একটা উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। মহান ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এটি প্রথম যে- নিবন্ধটি প্রকাশ করেছিল তার শিরোনাম হচ্ছে, “শিরিন আবু আকলেহ, পথিকৃৎ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, ৫১ বছর বয়সে মারা গেছেন।” (“Shireen Abu Akleh, Trailblazing Palestinian Journalist, Dies at 51.”)

 

 

একটা সংবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিরোনাম। ৯০ শতাংশেরও বেশি পাঠক শুধু সংবাদ শিরোনামই পড়েন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদেরকে একটা মৌলিক নিয়ম শেখানো হয়েছিল: শিরোনামটাকে অবশ্যই কর্তৃবাচ্যে লিখতে হবে, যেন তা কর্তাকে নির্দেশ করে- ব্যক্তি, স্থান, বা যা কিছু বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদন করে। এখানে, টাইমস ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকৃত কর্তার জায়গাটা খালি রেখে দিয়েছে। যেন পাঠক অনুমান করে বসেন, যে এই বাক্যের কর্তা স্বয়ং আবু আকলেহ,  কাণ্ডটা সাংবাদিক শিরিন নিজেই ঘটিয়েছেন, তিনি মরে গেছেন।

 

তার মধ্য থেকে টাইমস সম্পাদকরা মৃত্যু শব্দটিকেই বেছে নিয়েছেন। ভুলে যাবেন না, শব্দে অনেককিছুই আসে যায়। মৃত্যু-র সাথে খুন, হত্যা, বা গুপ্তহত্যা শব্দগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। আবু আকলেহ মারা গেছেন পড়ে কোনো পাঠক যদি ভেবে বসেন যে সাংবাদিকটি ক্যান্সারের সাথে লড়াই শেষে, আত্মহত্যা করে, বিদেশে ছুটি কাটানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পরে বা ঘুমের ভেতরে মারা গেছেন, তাহলে হয়তো তাকে দোষ দেয়া যাবে না।

 

কথা আরও আছে। ক্রিয়াপদের দিকে একটু খেয়াল করুন। অকালেই সাংবাদিক শিরিনের জীবনের পরিসমাপ্তি বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক ক্রিয়াপদই বাছাই করা যেত। তার মধ্য থেকে টাইমস সম্পাদকরা মৃত্যু শব্দটিকেই বেছে নিয়েছেন। ভুলে যাবেন না, শব্দে অনেককিছুই আসে যায়। মৃত্যু-র সাথে খুন, হত্যা, বা গুপ্তহত্যা শব্দগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। আবু আকলেহ মারা গেছেন পড়ে কোনো পাঠক যদি ভেবে বসেন যে সাংবাদিকটি ক্যান্সারের সাথে লড়াই শেষে, আত্মহত্যা করে, বিদেশে ছুটি কাটানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পরে বা ঘুমের ভেতরে মারা গেছেন, তাহলে হয়তো তাকে দোষ দেয়া যাবে না। এই সব ধরণের মৃত্যুকেই মৃত্যু শব্দটি দিয়ে বর্ননা করে যেতে পারে এবং এই ধড়নের মৃত্যুগুলোর ক্ষেত্রে মৃত্যু সংঘঠনে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা থাকে না।


 

শিরোনামের শব্দচয়ন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই পাঠককে সংবাদের প্রতি আকৃষ্ট করে।  ফিলিস্তিনে মারা যাওয়া একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের ব্যাপারে পশ্চিমের একজন পাঠক হয়তো আগ্রহ বোধ করবেন না।  কিন্তু ওই একই পাঠক হয়তো সেই সংবাদের গভীরে তলিয়ে যেতে খুবই আগ্রহী হবেন, যেখানে একজন অভিজ্ঞ ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের কথা বলা হয়েছে, যিনি সংবাদ সংগ্রহের সময়ে একজন ইসরায়েলি আততায়ীর হাতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হয়েছেন, যিনি একদল সাংবাদিকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে খবর প্রচার করছিলেন; তার গায়ে ছিল নীল রঙের ‘প্রেস’ লেখা একটি পোশাক, আর মাথায় ছিল একটা হেলমেট।

 

 

খুব সম্ভবত নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের পাঠকদের সাধারণ বুদ্ধিশুদ্ধি আর সতর্কতাকে খাটো করে দেখেছিল। ভেবেছিল কেউ বুঝি এই ভণ্ডামিটা ধরতে পারবে না। কিন্তু সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ- এর মৃত্যুর বিষয়ে এর প্রথম সংবাদ শিরোনামটি ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এর ফলে পত্রিকাটি বাধ্য হয় সংবাদ শিরোনামটি আনুষ্ঠানিকভাবে এভাবে হালনাগাদ করতে: পশ্চিম তীরে খুন হলেন পথিকৃৎ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক।

 

এমনকি এই সংস্করণটাও কাজটা কে করেছে তা এড়িয়ে গেছে। কার হাতে খুন হলেন? পাঠকরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন, সংশোধন করে দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনামটার। যেমন, এই শিরোনামটির নিম্নোক্ত পুনর্লিখনটাও কর্মবাচ্যে হলেও অন্তত খুনীর পরিচয়টা এখানে উন্মোচিত আছে।

 

 

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের শিরোনামের সম্পাদনা প্রস্তাব করে একটি টুইট।

ছবি: JVP#SAVEMASAFRYATTA, টুইটার

 

ভিন্ন একটা গণমাধ্যমের বিবরণ থেকে কে এবং কী ঘটিয়েছে সেটা নিজেদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করার সময়েও হিমশিম খেয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। শিরিনের হত্যাকাণ্ডটির ব্যাপারে একটি নিবন্ধে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে যে, ফিলিস্তিনে তাদের তারকা সাংবাদিকের মৃত্যুর ব্যাপারে আল জাজিরার বিবৃতি অনুসারে, ইসরায়েল বাহিনী আর ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের মধ্যে “সংঘাত” চলাকালে আবু আকলেহ খুন হয়েছেন। চলুন, আল জাজিরা প্রকাশিত আসল বিবৃতিটা দেখে নেই:

 

 

“একটা নির্লজ্জ হত্যাকাণ্ড, আন্তর্জাতিক আইন আর রীতিনীতি লঙ্ঘন করে, ফিলিস্তিনে আল জাজিরার সংবাদদাতা শিরিন আবু আকলেহকে ঠাণ্ডা মাথায় গুপ্তহত্যা করেছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী- আজ সকালে, ২০২২ সালের মে মাসের ১১ তারিখ বুধবারে, তাঁকে সরাসরি বুলেটের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার সময় শিরিন তাঁর সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি একটি প্রেস জ্যাকেট পরে ছিলেন যেটি তাকে নিশ্চিতভাবে সাংবাদিক হিসেবে শনাক্ত করছিলো। শিরিন তখন পশ্চিম তীরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে অভিযানরত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর কর্মকাণ্ড প্রচার করছিলেন।”

 

 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে কাজটা কারা করেছেন, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পরে যাবার কোনো কাহিনীও এখানে নেই। দ্য টাইমস একটা সংশোধনী দিতে বাধ্য হয়েছিল।

 

 

সাংবাদিক আবু আকলেহ খুন হওয়ার ঘটনার নিন্দার মুখে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদ সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছে

 

 

আবু আকলেহর গুপ্তহত্যা বিষয়ে নিজেদের সংবাদ শিরোনামে আসল কর্তাকে এড়িয়ে গেছে এমন গণমাধ্যম কেবল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস নয়, এই তালিকায় অন্যরাও আছে:

 


এরকম আরো অজস্র উদাহরণ আছে: 
যে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডের সংঘটক হিসেবে ইসরায়েল বা একজন ইসরায়েলীর নাম নিতে যেসব পশ্চিমা গণমাধ্যম আউটলেট এত দ্বিধা বোধ করে, ফিলিস্তিন বা ফিলিস্তিনিদের নাম নেয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে কোনোপ্রকার দ্বিধা বোধ করতে দেখা যায় না।

  • দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস: সম্প্রতিকালে ইসরায়েলে সংঘটিত হওয়া পঞ্চম আক্রমণের ঘটনায় জনৈক ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী ৫ জনকে খুন করেছে। Palestinian gunman kills 5 in Israel’s fifth attack in recent days
  • দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস: হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলে দুই থাই কর্মী খুন হয়েছেন। Hamas rocket attack kills two Thai workers in Israel

 

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রচার করার জন্য আক্রমণকারীর নাম নেয়ার ব্যাপারেও তাদেরকে বেশ স্পষ্ট অবস্থান নিতে দেখা যায়।

 

  • বিবিসি: ইউক্রেন যুদ্ধ: কিয়েভে রুশ হামলায় প্রতিবেদক ভিরা হিরিচ খুন
  • দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস: ভিডিও: রুশ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনীয় সাংবাদিক খুন
  • ফক্স নিউজ: কিয়েভ পুলিশের ভাষ্যমতে, রুশ গোলাবর্ষণে এনওয়াইটির সাবেক প্রদায়ক খুন, অন্য সাংবাদিকরা আহত

 

কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন সংবাদমাধ্যমগুলো ঘাতক ইসরায়েলী স্নাইপারকে অভিযুক্ত করতে কুণ্ঠাবোধ করছে, কারণ বুলেটটা কোথা থেকে আসল, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমরা শেষ দৃষ্টান্তের শিরোনামের মত কিছু দেখতে পেলাম না কেন? শিরোনাম তো এমনও হতে পারতো: আলজাজিরার সাংবাদিক খুন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ভাষ্য অনুযায়ী ঘাতক ইসরায়েলি স্নাইপার ।

 

 

সত্য বলার সময় হয়েছে

 

সম্প্রচারের ক্ষেত্রে শিরোনামের সমস্যা ছাড়াও সংবাদ প্রচারেরও অনেক বড় বড় সমস্যা আছে। এমন না যে শিরিন আবু আকলেহকে গুপ্তহত্যার মধ্য দিয়ে এই প্রথম বা এই শেষবারের মত ইসরায়েল ভয়াবহ কোনো অন্যায় করল। সমস্যা হচ্ছে ইসরায়েলের করা অধিকাংশ অপরাধ খবরের বিষয়ই হয় না। আমার জীবদ্দশায় আমি এমন অসংখ্য সংবাদ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছি যা উপেক্ষা করা হয়েছে, আর এমন অসংখ্য নিবন্ধ দেখেছি যেখানে ফিলিস্তিনের চাইতে ইসরায়েলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

 

মূলধারার গণমাধ্যম নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েই চলেছে। নিপীড়নকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে তারা। আমি এই অবস্থানটাকে সাংবাদিকতার মৌল উদ্দেশ্যের বিপরীত ব্যাপার মনে করি। আর সেই মৌল উদ্দেশ্য হল ভাষাহীনকে ভাষা দেয়া। ইনসাফ, সমতা, স্বাধীনতা, আর সত্যের ব্যাপারে সর্বজনীনভাবে গৃহীত নীতিগুলোর পক্ষে লড়াই করা।

 

এডওয়ার্ড সাঈদ, নোয়াম চমস্কি, এবং শত শত লেখক, ভাষ্যকার, আর পণ্ডিতজন এই পক্ষপাতের ব্যাপারে লিখেছেন। লিখেছেন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ আর রাজনীতিকরাও। তারপরও মূলধারার গণমাধ্যম নিপীড়কের পক্ষে অবস্থান নিয়েই চলেছে। নিপীড়নকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে তারা। আমি এই অবস্থানটাকে সাংবাদিকতার মৌল উদ্দেশ্যের বিপরীত ব্যাপার মনে করি। আর সেই মৌল উদ্দেশ্য হল ভাষাহীনকে ভাষা দেয়া। ইনসাফ, সমতা, স্বাধীনতা, আর সত্যের ব্যাপারে সর্বজনীনভাবে গৃহীত নীতিগুলোর পক্ষে লড়াই করা।

 

এই গণমাধ্যমের নিজেদেরকে নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সময় এসেছে নিরপেক্ষ থাকার।  সত্যটা যেমন তাকে ঠিক সেভাবেই তুলে ধরার। কোনো রকম পূর্বানুমান, ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার, আর এই ঘৃণ্য জালিয়াতির আশ্রয় বন্ধ করার। সময় এসেছে যে করেছে তার নাম নেয়ার, এমনকি কাজটা যখন ইসরায়েলের হয়ে থাকে।

 

মূল লেখা ২০২২ সালের ১৩ মে মন্ডোওয়েইস- এ প্রকাশিত হয়েছে।

https://mondoweiss.net/2022/05/its-time-for-the-media-to-name-the-killer-israel/

 

লেখক পরিচিতি: আহমেদ আলনাউক বেড়ে উঠেছেন গাজা উপত্যকায়। তিনি উই আর নট নাম্বার্স নামের একটি উদ্যোগের সাবেক প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং বর্ডার গন নামের একটি গণমাধ্যম প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ইওরো-মেডিটেরিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড আউটরিচ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  

Your Comment