বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ Thursday 21st November 2024

বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

Thursday 21st November 2024

আন্তর্জাতিক বিশ্ব

আমাকে আমার মত হতে শেখাও

২০২২-০৬-২৩

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো

উপনিবেশ পরবর্তী আফ্রিকাতেও কিভাবে নতুন শাসকদের মাধ্যমে পুরনো বশ্যতার মানসিকতাই অটুট থেকেছে, সে বিষয়ে নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোর এই রচনাটি ধ্রুপদী মর্যাদা পেয়েছে। এই লেখায় নগুগি দেখিয়েছেন কেনিয়ার শিক্ষা-সংস্কৃতি-প্রযুক্তির অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখাটাই শাসকদের স্বার্থ, জনগণকে অক্ষম বানিয়ে রাখাটাই তাদের ক্ষমতার উৎস।

 

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো। উৎস: উইকিপিডিয়া 

 

১৯৬৯ সালে নাইরোবি হতে প্রায় শ খানেক মাইল দূরের এক শহর, নায়েরিতে গাকাম্বা নামক এক সাইকেল মেরামতকারী নিজের বাড়ির পেছনে একটা পুরনো স্কুটারের ইঞ্জিন খুঁজে পান। সেই পুরনো লোহালক্কর দিয়ে তিনি এবার একটা উড়োজাহাজ বানিয়ে ফেলেন, এবং তার নাম দেন কেনিয়া এক। উড়োজাহাজটা কয়েক মাইল ঠিকঠাক উড়েছিল, কিন্তু নামার সময় ওটা কতগুলো গাছের উপর বিধ্বস্ত হয়। সদ্য স্বাধীন হওয়া কেনিয়া প্রজাতন্ত্রের সেসময়কার অ্যাটর্নি জেনারেল, চার্লস নিয়োঞ্জো অনুমোদন ছাড়া গাকাম্বা আর কখনো যেনো কোন উড়োজাহাজ চালাতে না পারে, সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এটাও তাকে বুঝিয়ে দেন যে তার এই আদিম যুগের উড়োজাহাজ মোটেই ইউরোপের বানানো অত্যাধুনিক পবনপোতের সাথে তাল মেলানোর যোগ্য না।

 

 

নিয়োঞ্জো যে গাকাম্বাকে উড়োজাহাজ ওড়াতে দিলেন না, এই নিয়ে আমি যত না আগ্রহী, তারচেয়ে বেশি আগ্রহী এই দুইজন মানুষের প্রতীকী অবস্থান নিয়ে, নিজের মাতৃভূমির ব্যাপারে তাদের আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। গাকাম্বা সম্ভবত মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার করেনি। কিন্তু নিয়োঞ্জো দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্ট হেয়ার ইউনিভার্সিটি এবং লন্ডনের লিঙ্কন'স ইন থেকে পড়াশুনা করে বেরিয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি ছিলেন একজন বিলেতি উকিল এবং তার সময়ের সবচাইতে উচ্চশিক্ষিত কেনিয়ানদের একজন।

 

গাকাম্বা, একজন গিকুয়্যু-ভাষী লোহার মিস্ত্রি, একজন রাস্তার পাশের কারিগর বিশ্বাস করেছিলেন যে কেনিয়াতেও উড়োজাহাজ বানানো সম্ভব, এবং তা প্রমাণ করতে তিনি একটা বানিয়েও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজিভাষী উকিলের মনে হলো এসব আমাদের দ্বারা হবে না। গাকাম্বা চেয়েছিল নিজের মত করে স্বপ্ন দেখতে; আর নিয়োঞ্জো চেয়েছিল অন্যের স্বপ্নেই বিভোর হয়ে থাকতে। গাকাম্বা চেয়েছিল সম্ভবকে অসম্ভবের হাত থেকে উদ্ধার করে আনতে। আর উচ্চশিক্ষিত কেনিয়ান ভদ্রলোক নিখুঁত বিলাতি উচ্চারণে বলে দিলেন, "ওসবের চেষ্টাও করবে না।"

 

 

নিয়োঞ্জো এত ভালো ইংরেজি পারতেন যে তা নাকের ফুটো দিয়েও তিনি বলতে পারতেন, ইউরোপীয় উপনিবেশিকদের ব্যাপারে আমরা এরকমই বলতাম। অপরদিকে গাকাম্বা মোটেই ভালো ইংরেজি বলতে পারতেন না, তবে তিনি হয়তো গিকুয়্যু বেশ ভালো বলতে পারতেন। এসব বলার অর্থ হচ্ছে: গাকাম্বা, একজন গিকুয়্যু-ভাষী লোহার মিস্ত্রি, একজন রাস্তার পাশের কারিগর বিশ্বাস করেছিলেন যে কেনিয়াতেও উড়োজাহাজ বানানো সম্ভব, এবং তা প্রমাণ করতে তিনি একটা বানিয়েও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজিভাষী উকিলের মনে হলো এসব আমাদের দ্বারা হবে না। গাকাম্বা চেয়েছিল নিজের মত করে স্বপ্ন দেখতে; আর নিয়োঞ্জো চেয়েছিল অন্যের স্বপ্নেই বিভোর হয়ে থাকতে। গাকাম্বা চেয়েছিল সম্ভবকে অসম্ভবের হাত থেকে উদ্ধার করে আনতে। আর উচ্চশিক্ষিত কেনিয়ান ভদ্রলোক নিখুঁত বিলাতি উচ্চারণে বলে দিলেন, "ওসবের চেষ্টাও করবে না।"

 

এখানেই কেনিয়ার অভ্যন্তরীণ দুটি পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়: গাকাম্বার দৃষ্টিভঙ্গি বলে, আফ্রিকাও চাইলে অনেককিছু উদ্ভাবন করতে পারে। নিয়োঞ্জো বলেন, ওসব ইউরোপই ভালো পারে। একজন সক্ষম, বিদেশ ঘুরে আসা কেনিয়ান হিসেবে আরেকজন নিখাদ প্রতিভাবান কেনিয়ানের পাশে এসে দাঁড়ানোর বদলে নিয়োঞ্জো গাকাম্বার স্বপ্নগুলো চুরমার করে দিলেন। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, এর ফলাফল যা দাঁড়ালো তা হলো, গাকাম্বার উদ্ভাবনের সাথে-সাথে কেনিয়ার সাধারণ মানুষের পক্ষেও যে অনেককিছু করা সম্ভব তার একটি অপূর্ব নিদর্শনও ধামাচাপা পড়ে গেল।

 

 

গাকাম্বার এই উদ্যম এবং এর নিয়তি আমাকে ষাটের দশকের আরেকটা ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছিল। এটাও ১৯৬৯ সালের ঘটনা। আমি ইউনিভার্সিটি অফ নাইরোবিতে ইংরেজি বিভাগে র সাথে যুক্ত  হওয়ার কিছুদিন পরের কাহিনী। স্পেন্সার হতে শুরু করে স্পেন্ডার, শেক্সপিয়র থেকে টি.এস. এলিয়ট, ইংরেজদের জাতীয় সাহিত্যের সবই ছিল আমাদের সিলেবাসের প্রধান পাঠ্য। উয়োর আনিয়ুম্বা, তাবান লো লিয়োং এবং আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম কেনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন ইংরেজি সাহিত্য হবে প্রধান কেন্দ্রবিন্দু? আমরা ইংরেজি বিভাগ বাতিল করার দাবি তুলেছিলাম।

 

 

আসলে আমরা ইংরেজি সাহিত্য বাতিল করার আমরা তুলিনি, বরং আমাদের দাবি ছিল আমাদের বাস্তবতার সাথে এর সম্পর্ককে আরেকবার ঝালাই করে নেয়ার: আমরা কি ওখান থেকে শুরু করে আমাদের এখানে পৌঁছাব—যা একটি উপনিবেশিক প্রক্রিয়া, যেখানে নিজের শিকড়কেই অস্বীকার করা হয়? নাকি আমরা এখান থেকে শুরু করে ওদের ওখানে পৌঁছাব—যা একটি উপনিবেশবিরোধী, এবং নিজেকে স্বীকার করে নেয়ার অগ্রমুখী প্রক্রিয়া?

 

 

আমরা চেয়েছিলাম কেনিয়াকেই আমাদের সাহিত্যিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তার মাধ্যমেই গোটা পৃথিবীর সাথে সংযোগস্থাপন করতে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ইংরেজি জাতীয় সাহিত্য বিভাগের বদলে একটি সাহিত্যের বিভাগ গড়ে তোলা যার কেন্দ্রে থাকবে কেনিয়ান, পূর্ব-আফ্রিকান, আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ান এবং অ্যাফ্রো-আফ্রিকান সাহিত্য। তারপরে থাকবে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং তারও পরে ইউরোপ, মোটামুটি এই ক্রমানুসারেই। সেসময় আমাদের ইংরেজি বিভাগ চাইছিল সাহিত্যকে কেবল ইংরেজি ভাষার ভেতর বন্দি করে রাখতে; আর আমরা চাইছিলাম সাহিত্যকে ইংরেজির কব্জা থেকে মুক্ত করে গোটা পৃথিবীর সাথে সংযোগ গড়ে তোলার। সেই বিতর্ক, সেই মহান নাইরোবি বিতর্ক থেকেই পরে আফ্রিকায় এবং তার বাইরে জন্ম নিয়েছিল সেই তত্ত্ব যাকে আমরা আজ উত্তর-উপনিবেশবাদ বলে জানি।

 

 

আমাদের বিভাগ থেকে বের হওয়া অনেকেই পরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী হয়েছিলেন: বর্তমানে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইংরেজির প্রভাষক, সাইমোন গিকান্ডি; প্রেটোরিয়ার প্রভাষক জেমস ওগুদে; এবং ইউনিভার্সিটি অফ রোড আইল্যান্ডের প্রভাষক গিতাহি গিতিতি, এরা হলেন কেবল কয়েকজন যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের নাম প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কিন্তু এছাড়াও আমাদের দেশের মধ্যেও অনেকেই আছেন: হেনরি চাকাভা, ক্রিস ওয়ানজালা, ওয়ানজিকু মুকাবি, কিমানি জোগু। তাদের সর্বপ্রকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতির মূলে রয়েছে তাদের কেনিয়ান শিকড়।

 

১৯৭৪ সালে আমাদের সাহিত্য বিভাগ স্কুলগুলোতে পড়ানোর ক্ষেত্রে একটা নতুন ধরণের জন্ম দেয় যা প্রথমে কেনিয়া, তারপর আফ্রিকা এবং তারপরে গোটা বিশ্বকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। অর্থাৎ, প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে আসা একটা বাচ্চাও কেনিয়ার সাহিত্য ও তার সাথে এশিয়া ও ইউরোপের সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা হলেও জানবে। এতে করে তারা বেড়ে উঠবে বিশ্বসাহিত্যের নাগরিক হিসেবে, তবু তাদের শিকড় দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকবে কেনিয়াতেই। কিন্তু মোই সরকার  সাহিত্যের কারিকুলামটাকেই পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এই সিলেবাসটাকে নস্যাৎ করে দেয়।

 

 

১৯৭৪ সালে আমাদের সাহিত্য বিভাগ স্কুলগুলোতে পড়ানোর ক্ষেত্রে একটা নতুন ধরণের জন্ম দেয় যা প্রথমে কেনিয়া, তারপর আফ্রিকা এবং তারপরে গোটা বিশ্বকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। অর্থাৎ, প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে আসা একটা বাচ্চাও কেনিয়ার সাহিত্য ও তার সাথে এশিয়া ও ইউরোপের সাহিত্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা হলেও জানবে। এতে করে তারা বেড়ে উঠবে বিশ্বসাহিত্যের নাগরিক হিসেবে, তবু তাদের শিকড় দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকবে কেনিয়াতেই। কিন্তু মোই সরকার  সাহিত্যের কারিকুলামটাকেই পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এই সিলেবাসটাকে নস্যাৎ করে দেয়। তাদের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, ইংরেজি ভাষাকে কেনিয়া হতে জন্ম নেয়া বিশ্বসাহিত্যের দূষণ থেকে রক্ষা করতে হবে; ইংরেজি ভাষার জেলখানাটাকে যেকোনো মূল্যে সুরক্ষিত রাখতে হবে, যাতে করে কেনিয়ার সাংস্কৃতিক কয়েদিরা পালিয়ে স্বাধীন হয়ে যেতে না পারে।

 

সাহিত্য কারিকুলামটাকে ধ্বংস করে ফেলাও জেলরক্ষকদের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কামিরিথু ঘটনা ঘটাতে হয়েছে। এই নিয়ে আমি আগে অনেক লিখেছি, তাই এখানে বেশি বলবো না। কামিরিথু উদ্যোগের সময় ইউনিভার্সিটি অফ নাইরোবির বুদ্ধিজীবীরা কারখানা ও খেতের ভূমিহীন, বেকার শ্রমিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা অসাধারণ নাটক বানিয়েছিলেন। ওটার নাম ছিল গাহিকা দিন্দা (আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি তখন বিয়ে করবো)।

 

নাইরোবি থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরের কামিরিথু গ্রামের লোকেদের জন্য বানানো এই নাটকটা সম্ভবত ছিল উপনিবেশ-পর্বরতী কেনিয়ায় গিকুয়্যু ভাষায় লেখা প্রথম নাটক। এর পেছনের মূলকথাটি বেশ সহজ: আপনি যদি মনে করেন সাধারণ মানুষের কল্যাণই সকলপ্রকার উন্নয়নের উদ্দেশ্য ও মূল বিষয়, তাহলে আপনাকে তাদের সাথে মিলেমিশেই কাজ করতে হবে, তারা যেই ভাষায় নিত্যদিন কথা বলে সেই ভাষাই ব্যবহার করতে হবে।

 

শত শত মানুষের সামনে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু তারপর এর পরিণতিও হয় সেই সাহিত্য কারিকুলামের মতই। ১৯৭৭ সালের ১১ই নভেম্বির গাহিকা দিন্দা বন্ধ করে দেয়া হয়, এবং আমি সেই নাটকের লেখকদের মধ্যে একজন হওয়ায় আমাকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য সুরক্ষা কারাগারে পাঠানো হয়।

 

 

শত শত মানুষের সামনে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু তারপর এর পরিণতিও হয় সেই সাহিত্য কারিকুলামের মতই। ১৯৭৭ সালের ১১ই নভেম্বির গাহিকা দিন্দা বন্ধ করে দেয়া হয়, এবং আমি সেই নাটকের লেখকদের মধ্যে একজন হওয়ায় আমাকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য সুরক্ষা কারাগারে পাঠানো হয়।

 

কামিরিথু যা বলতে চাইছিল তা হলো, আফ্রিকার ভাষাগুলোতেই আমাদের জন্ম। আর আমাদের যারা বন্দি করে রেখেছিল তারা বারবার বোঝাতে চেয়েছে, ইংরেজি ভাষাতেই আমাদের জন্ম।

 

 

এই দিয়ে আবার গাকাম্বার অ্যারোপ্লেনের ঘটনায় ফেরা যাক। এইখানের প্রত্যেকটি গল্পেই আমরা দেখতে পাই বাইরের অনুগ্রহের আশায় নিজের দেশের জাতীয় উদ্যোগগুলোকে অস্বীকার করার নজির। কেনিয়ার মাটি থেকে যাই আসে তা সন্দেহজনক; আর বিদেশ থেকে, বিশেষত ইউরোপ থেকে যাকিছু আসে, তাকে বিনাবাক্যে স্বাগতম।

 

 

এসব কি স্রেফ কাকতালীয়?

 

 

এই প্রশ্নের তাগিদে চতুর্থ একটি ঘটনা মনে পড়লো। এটাও উপনিবেশ যুগের ঘটনা। বিয়ু কোইনাঙ্গে নামের এক লোক কেনিয়ার অ্যালায়েন্স হাইস্কুল থেকে বের হয়ে আমেরিকার হ্যাম্পটন ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেন, এবং সবশেষে আমেরিকার কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি হতে শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হন। ১৯৩৮ সালে তিনি কেনিয়ায় ফিরে আসেন। তার বাবা নিজের সন্তানের সাফল্যে এতই গর্বিত ছিলেন যে তিনি তাকে একটা পাথরের বাড়ি বানিয়ে দিতে চাইলেন। ছেলে তখন বাবার কাছে বারবার অনুরোধ করতে লাগলো, এই পাথরগুলো যেন গিথুঙ্গুরি টিচার্স কলেজের ভিত্তি নির্মাণের কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। এটি ছিল উপনিবেশ কেনিয়ার প্রথম উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান।

 

 

শিক্ষার জন্য একটি উচ্চতর প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখার প্রেরণা কোইনাঙ্গে পেয়েছিল বুকার টি. ওয়াশিংটনের আত্ম-নির্ভরশীলতার ধারণার মধ্য দিয়ে। ওয়াশিংটন নিজেও ছিলেন ভার্জিনিয়া হ্যাম্পটন ইন্সটিটিউটের ছাত্র এবং টাস্কেজি ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। তার সামাজিক মতাদর্শের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে তার অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনেকের কাছেই সম্মান অর্জন করেছিল এবং কোইনাঙ্গেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। গিথুঙ্গুরি তৈরি হয়েছিল কেনিয়ার সাধারণ নারী ও পুরুষের সহায়তায়, উপনিবেশিক সরকারের সাহায্যে না।

 

গিথুঙ্গুরি কলেজের উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্ত বিদ্যালয়গুলোর জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া ও সরবরাহ করা। কারিঙ্গা এবং মুক্ত বিদ্যালয় আন্দোলন নিজেই অনেক বিশাল ঘটনা ছিল। গার্ভেয়াইটদের আত্ম-নির্ভরশীলতার আহ্বানে অনুপ্রাণিত হয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল এবং এদের স্লোগান ছিল "আফ্রিকানদের তরে আফ্রিকা, ঘরে ও বাহিরে।" যখনই কোনো স্কুলের কমিটির প্রধান সদস্যদের সম্মেলন হতো, তাদের প্রথম কাজ হতো পকেট হাতিয়ে যতটুকু দেয়া সম্ভব তা টেবিলের উপর রাখা। গিথুঙ্গুরির আদর্শও ছিল এরকমই: সাধারণ নারী ও পুরুষেরা যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করবে, বড় হোক ছোট হোক। অর্থাৎ, গিথুঙ্গুরি ও মুক্ত বিদ্যালয় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতারা এমন এক স্বপ্ন দেখার সাহস করেছিলেন যা আর কেউ করেনি। আমরা কেনিয়ানরাও পারি, এই ছিল কেনিয়ানদের কথা। আমরা তোমাদের তা করতে দেব না, এই ছিল উপনিবেশিক সরকারের হুমকি।

 

১৯৫২ সালে সরকার গিথুঙ্গুরি এবং আফ্রিকার সবকটা মুক্ত বিদ্যালয় বন্ধ করে দিল। এছাড়াও আফ্রিকান ভাষার সকল খবরের কাগজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো, এমনকি বহু সম্পাদকদের জেলখানায় এবং কাউকে কাউকে নির্বাসনেও পাঠায়। গাকারা ওয়া ওয়ানজাউ এবং স্ট্যানলি কাগিকার মত কবিদের ধরে ধরে কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্পে পাঠানো হয়। শুনে অন্যকিছুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কি? এবং এই অপমানটাকে আরো রাজকীয় করে তোলার জন্য উপনিবেশিক রাষ্ট্র গিথুঙ্গুরির ভবনটাকে একটা জেলখানা বানিয়ে ফেলে এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদেরকে তারা মাউ মাউ বলে ডাকতো, তাদের এনে ফাঁসি দিতে শুরু করে। কেনিয়ান আফ্রিকার আত্ম-নির্ভরশীলতার প্রতীক পরিণত হলো লজ্জা, অপমান ও পরাজয়ের প্রতীকে।

 

 

১৯৫২ সালে সরকার গিথুঙ্গুরি এবং আফ্রিকার সবকটা মুক্ত বিদ্যালয় বন্ধ করে দিল। এছাড়াও আফ্রিকান ভাষার সকল খবরের কাগজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো, এমনকি বহু সম্পাদকদের জেলখানায় এবং কাউকে কাউকে নির্বাসনেও পাঠায়। গাকারা ওয়া ওয়ানজাউ এবং স্ট্যানলি কাগিকার মত কবিদের ধরে ধরে কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্পে পাঠানো হয়। শুনে অন্যকিছুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে কি? এবং এই অপমানটাকে আরো রাজকীয় করে তোলার জন্য উপনিবেশিক রাষ্ট্র গিথুঙ্গুরির ভবনটাকে একটা জেলখানা বানিয়ে ফেলে এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদেরকে তারা মাউ মাউ বলে ডাকতো, তাদের এনে ফাঁসি দিতে শুরু করে। কেনিয়ান আফ্রিকার আত্ম-নির্ভরশীলতার প্রতীক পরিণত হলো লজ্জা, অপমান ও পরাজয়ের প্রতীকে।

 

এইসব কেনিয়া-কেন্দ্রিক আফ্রিকা-পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ার পরেই খুব পদ্ধতিগতভাবে একদল ইংরেজিভাষী অভিজাতের জন্ম হলো, যারা আফ্রিকার ভাষাগুলো হতে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এবং এর ফলেই ১৯৫২ সালে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে আপনি গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ইতিহাস, এসবকিছুর উত্তর ইংরেজিতে লিখেও যতই ভালো করুন না কেন, ইংরেজি বিষয়ে আলাদাভাবে পাশ না করলে আপনাকে পরের শ্রেণিতে উঠতে দেয়া হবে না। ইংরেজিকেই তখন সুশিক্ষা, সার্বিক জ্ঞান ও মেধার পরিচায়ক হিসেবে গণ্য করা শুরু হলো। ১৯৬৪ সালে কেনিয়ার সদ্য স্বাধীন হওয়া আফ্রিকান সরকারও প্রাক-প্রাথমিক হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে সকল আফ্রিকান ভাষার বদলে ইংরেজিকে স্থান দিয়ে এই মানসিকতাকে জাতীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে।

 

 

ব্যাপারটা এমন না যে, উপনিবেশিক কর্তৃপক্ষরা নিজেদের অজান্তেই আফ্রিকা ও কেনিয়ার মানুষের ভেতরে এই কেনিয়া-বিরোধী, আফ্রিকা-বিরোধী মানসিকতার জন্ম দিয়ে গেছেন। ওয়াল্টার রোডনি তার বই হাউ ইউরোপ আন্ডারডেভেলাপড আফ্রিকা-তে আলিঁয়স ফ্রঁসেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা, পিয়ের ফোঁসিনের উদ্ধৃতি দেন, "বিংশ শতকের শুরুতে উপনিবেশগুলোকে খুব শক্তিশালী মানসিক শেকলের মাধ্যমে মহানগরীগুলোর সাথে আটকে রাখার প্রয়োজন ছিল, যাতে করে কোনোদিন তারা স্বাধীন হয়ে নিজেদের সরকার গঠন করলেও যেন তারা ভাষায়, চিন্তায় ও চেতনায় ফরাসিই থেকে যায়।"

 

 

আফ্রিকার ভাষাগুলোকে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে এভাবে বিতাড়িত করা হলো, তখন যারা এই ভাষায় কথা বলতো তাদের প্রায় আসামীর মত ধাওয়া করা শুরু হলো।

 

স্কুলে কোনো বাচ্চাকে আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পাওয়া গেলে তার পকেটে দুর্গন্ধযুক্ত চামড়া ভরে দেয়া হতো, কিংবা তার গায়ে আমি একটা বোকা লেখা একটা প্ল্যাকার্ড সেঁটে দেয়া হতো। পশুদের এভাবে বশে আনা হয়: অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের বিনিময়ে তাদের ব্যথা ও শাস্তি এবং আকাঙ্ক্ষিত আচরণের বিনিময়ে পুরস্কৃত করা হয়। এই পুরস্কার ও শাস্তি পদ্ধতিতে আত্মীকৃত করে নেয়া আচরণগুলোকেই পরে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে গিলিয়ে দেয়া হয়। ফলে কোনো ইংরেজি শব্দ শুনলেই আমাদের জিভে পানি চলে আসে, আর কোনো আফ্রিকান শব্দ শুনলেই ঘেন্নায় মুখ শুকিয়ে যায়।

 

 

স্কুলে কোনো বাচ্চাকে আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পাওয়া গেলে তার পকেটে দুর্গন্ধযুক্ত চামড়া ভরে দেয়া হতো, কিংবা তার গায়ে আমি একটা বোকা লেখা একটা প্ল্যাকার্ড সেঁটে দেয়া হতো। পশুদের এভাবে বশে আনা হয়: অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের বিনিময়ে তাদের ব্যথা ও শাস্তি এবং আকাঙ্ক্ষিত আচরণের বিনিময়ে পুরস্কৃত করা হয়। এই পুরস্কার ও শাস্তি পদ্ধতিতে আত্মীকৃত করে নেয়া আচরণগুলোকেই পরে স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মকে গিলিয়ে দেয়া হয়। ফলে কোনো ইংরেজি শব্দ শুনলেই আমাদের জিভে পানি চলে আসে, আর কোনো আফ্রিকান শব্দ শুনলেই ঘেন্নায় মুখ শুকিয়ে যায়।

 

নিয়োঞ্জো ও তার নিখুঁত ইংরেজি উচ্চারণ কোনো কাকতালীয় ঘটনা না, এবং তার প্রতিক্রিয়াও কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার না। ঘটনা হলো, আফ্রিকার মোটামুটি শিক্ষিত প্রতিটি মধ্যবিত্তের ভেতরে একজন নিয়োঞ্জো রয়েছে। এই নিয়োঞ্জোবাদ এখনও আফ্রিকার জন্য একটি সমস্যা। ইউরোপ আফ্রিকাকে দিয়েছে তার উচ্চারণবিধি, আর আফ্রিকা ইউরোপকে দিয়েছে তার সম্পদ। এটা সত্য যে তলোয়ারের জোরেই ইউরোপ আফ্রিকার প্রবেশাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল—কিন্তু নিজের স্থায়িত্ব সে নিশ্চিত করে গেছে পরাজিতের মধ্যে নিজের উচ্চারণের প্রতি মুগ্ধতার মধ্য দিয়ে।

 

 

গতবছর এখানে এসে ইউনিভার্সিটি অফ নাইরোবিতে বিভিন্ন জিনিস বানানো হচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগলো: রয়্যাল সাটিমা মিনারেল ওয়াটার, এবং ইউনিভার্সিটির দই। আমি কেনিয়ায় বানানো তাদের এই দই খেলাম, পানি খেলাম, এবং সত্যিই খুব ভালো লাগলো। জার্মানিতে যখন আমি আমার দশম অনোরারি ডক্টোরেট নিতে গেলাম, তখন মোই ইউনিভার্সিটির দল আমাকে তাদের বানানো কাপড়ের একটি জামা উপহার দেয়। আমার পাওয়া বহু বছরের মাঝে শ্রেষ্ঠ একটি উপহার ছিল সেটা: কেনিয়া উৎপাদিত কাপড় দিয়ে কেনিয়াতেই বানানো একটি পোষাক। সরকারী সংস্থাগুলো কেনিয়ার মালিকানাধীন এই উদ্যোগগুলোর সাথে ব্যবসা করতে রাজি হলে কী হতো? কী হতো যদি নিয়োঞ্জো বলতেন, আমাকে আরেকটি উড়োজাহাজ বানিয়ে দাও।

 

 

এমনটাই তো হওয়া উচিৎ ছিল। উত্তরটা আমাদের মধ্যেই আছে। বন্ধুরা আমার, চলুন নাইরোবি ইউনিভার্সিটি মোই ইউনিভার্সিটির মত আমরাও নিজেদের মত কিছু তৈরি করি। কেন শুধু কাপড়, দই আর মিনারেল পানিতে থামবো? বাইসাইকেল কেন নয়? বৈদ্যুতিক গাড়ি কেন না? কেন অ্যারোপ্লেন নয়, আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা অস্ত্র কেন নয়?

 

কোনো দেশেরই স্থায়ী কোনো বন্ধু নেই, শুধু আছে স্থায়ী স্বার্থ। যার উপর আজ আপনি নির্ভর করে আছেন যে সে আপনাকে অস্ত্র দেবে, সে-ই হয়তো আগামীকাল আপনাকে নিরস্ত্র করতে চাইবে। যে আপনাকে আজ খাবার দেয়, সে-ই কাল তার সব খাদ্য ফিরিয়ে নেবে। প্রতিটি দেশেরই অধিকার রয়েছে সবার আগে নিজের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করার। ন্যুনতম এতটুকু সক্ষমতা এর থাকতেই হবে।

 

 

কোনো দেশেরই স্থায়ী কোনো বন্ধু নেই, শুধু আছে স্থায়ী স্বার্থ। যার উপর আজ আপনি নির্ভর করে আছেন যে সে আপনাকে অস্ত্র দেবে, সে-ই হয়তো আগামীকাল আপনাকে নিরস্ত্র করতে চাইবে। যে আপনাকে আজ খাবার দেয়, সে-ই কাল তার সব খাদ্য ফিরিয়ে নেবে। প্রতিটি দেশেরই অধিকার রয়েছে সবার আগে নিজের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করার। ন্যুনতম এতটুকু সক্ষমতা এর থাকতেই হবে।

 

আমাদের আগাতে হবে স্বাধীনতা, মৌলিকত্ব, উৎকর্ষের দিকে; পরনির্ভরশীলতা, অনুকরণ ও ভিক্ষার দিকে নয়। এটাই হতে হবে আমাদের সংস্কৃতি, এভাবেই আমাদের তাকাতে হবে কেনিয়া ও আফ্রিকার দিকে। আমাদের শিক্ষা ও অর্থনীতিতে, গ্রহণে ও দানে আমরা যেসব সিদ্ধান্ত আমরা নেই সব হতে হবে আমাদের নিজেদের। এটাই হতে হবে আমাদের জীবনের অংশ, কেনিয়ান জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়। আসুন ধ্বংস করে ফেলি এই পরনির্ভরশীলতা, অনুকরণ ও ভিক্ষার সংস্কৃতি।

 

একজন অনুকরণকারী মানেই হলো একজন অনুসরণকারী, যার নিজের প্রতি কোনো আস্থা নেই। এবং নিজের প্রতি এই অনাস্থার শুরুটা হয় ভাষার মাধ্যমে। আপনি পৃথিবীর সবকটা ভাষা জানেন, অথচ নিজের মাতৃভাষা জানেন না, এটাই দাসত্ব। আপনি যদি সবার আগে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং তারপর গোটা বিশ্বের ভাষাকে তার সাথে যোগ করতে পারেন, তখন সেটা ক্ষমতায়ন।

 

যারা আফ্রিকার সেই মুক্ত বিদ্যালয় এবং গিথুঙ্গুরি টিচার্স কলেজ খুলেছিল তাদের থেকে আমাদের শেখা উচিৎ। তারা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। আর আজ আমরা জনগণের টাকা মেরে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য রেখে দিচ্ছি। তাদের জন্য নেতৃত্ব ছিল জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। উপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা সত্ত্বেও তারা কেনিয়ান চোখ দিয়ে কেনিয়ার দিকে তাকাতে পেরেছিল এবং চেয়েছিল কেনিয়াকে এই বহিরাগতদের হাত থেকে উদ্ধার করতে। যখনই আমরা বহিরাগতদের চোখ দিয়ে কেনিয়ার দিকে তাকাই, তখনই আমরা কেনিয়ার সাধারণ নারী ও পুরুষেরা যেই স্বপ্নের জন্য রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে গেছেন তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি।

 

 

আমার কেঁদো না শিশু উপন্যাসের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি সম্মেলনে একটি দল আত্মোৎসর্গের সেই ইতিহাসটাকে মঞ্চে তুলে ধরেছিল, যা বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। নিজেদের শরীরের মাধ্যমে তারা যে ছবিটা তৈরি করেছিল তাতে সেই সংগ্রামের কষ্ট ও গৌরব অসাধারণভাবে ফুটে উঠেছিল। তারা বিপ্লবের নানন্দিকতাকে আরো নাটকীয় করে তুলেছিল। আর তারা গাইছিল: আমাকে আমার মত হতে শেখাও। যদি আমাকে আমি হতে শেখাও তবেই আমায় দেখতে পাবে। যদি আমাকে আমি হতে শেখাও তবেই আমি স্বাধীন হতে পারবো, নাকি মুক্ত আমাকে তুমি ভয় পাও?

 

(২০১৫ সারে কেনিয়ার নাইরোবী বিশ্ববিদ্যালয় ও কেনিয়াত্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখকের দেয়া বক্তৃতার লিখিত রূপ। )

 

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো।

জন্ম ১৯৩৮ সাল। উত্তর-উপনিবেশী তাত্ত্বিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সাহিত্যতাত্ত্বিক এবং অধ্যাপক।

ইংরেজি সাহিত্য ও পশ্চিমকেন্দ্রিকতার বদলে আফ্রিকার নিজস্ব ভাষাসমূহ এবং স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার অন্যতম প্রবক্তা থিয়োঙ্গো কৃষক ও শ্রমিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করে দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন। বন্দিত্বের সময়েও তাঁর সাহিত্যচিন্তা ও উপন্যাস রচনার কাজ অব্যাহত ছিল।

তর্জমা: মাহীন হক

 

 

মূল লেখার লিঙ্ক: https://www.guernicamag.com/teach-me-to-be-me/?fbclid=IwAR3PZu7xOQl7_RKdDWuaOXwx-cx2fJ8hqiuAhSL_yu0j5DPeOCzswsezIrw

 

 

 

 

Your Comment